সুইস ব্যাংকগুলোয় ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থের হিসাব দেওয়া হবে

অবশেষে সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকার হিসাব দিতে সম্মত হয়েছে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে কালো টাকার হিসাব নিতে এ মাসেই সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে ভারত সরকারের একটি প্রতিনিধিদল।
সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ফিলিপ ওয়েলটি জানিয়েছেন, এ বছরের শেষের দিকে দ্বৈত কর সংশোধন করে চুক্তিতে কর ফাঁকির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা রয়েছে, তা জানাতে আর বাধা থাকবে না।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এই অর্থ উদ্ধারের জন্য ভারত সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবে।
এদিকে সুইস ব্যাংকগুলোর সংগঠন ‘স্যাব’ ভারতকে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিদের সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর এবার চড়া হারে কর আরোপ করতে চলেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার জেরে বিভিন্ন দেশ থেকে দাবি ওঠায় সুইস কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্যাবের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জেমস ন্যাসন বলেছেন, ‘ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে কালো টাকা আমদানি বন্ধের সাহায্য চেয়েছে। আমরা সেই আবেদনের কপি সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। আমরা সুইস সরকারের সিদ্ধান্ত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
প্রসঙ্গত, ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও একই দাবি করেছে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই দাবিতে সাড়া দিয়ে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় সাড়ে চার হাজার গোপন ব্যাংক হিসাবের হদিস দিয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী রাম জেঠমালানি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করে সুইস ব্যাংক থেকে কালো টাকা উদ্ধারে ভারত সরকারের অবস্থান এখন কোন পর্যায়ে, তা জানতে চেয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি এ সংক্রান্ত ২১টি নথি ভারত সরকারকে সুুপ্রিম কোর্টে পেশ করার জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে জি বালাকৃষ্ণন, বিচারপতি পি সত্যশিবম ও বিচারপতি বি এস চৌহানকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ জানান, সরকার ওই ২১টি নথির মধ্যে কিছু নথিকে ‘গোপন নথি’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন, আবার কিছু নথিকে প্রকাশ্যে আনতে পারেন।
এদিকে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভারত সরকারকে আরও জানিয়েছে, সেখানে ১০ লাখ কোটি রুপিরও বেশি বিদেশিদের অর্থ সঞ্চিত আছে। বিজেপি বলেছে, ওই অর্থের মধ্যে ভারতীয়দের রয়েছে ৫০ থেকে ১৪০ কোটি ডলার।
এখন এই কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসক জোটের প্রধান দল কংগ্রেস এবং বিরোধী জোটের প্রধান দল বিজেপি ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে ১০০ দিনের মধ্যে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকার বিবরণ জানিয়ে দেবে দেশবাসীকে। এ কথা নির্বাচনের প্রচারের সময় ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বিরোধীদলীয় নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি।
কিন্তু ১০০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও মনমোহন সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তবে ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-৮ সম্মেলনে মনমোহন এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সম্মেলনের সুপারিশ অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশের ব্যাংকে, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত হিসাববহির্ভূত বেআইনি টাকা উদ্ধারে নামার ঘোষণাও দেয়।
অন্যদিকে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় অর্থবিলের ওপর জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে কালো টাকা অর্থ উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।
এরপর ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জি-৮ভুক্ত দেশের সুপারিশ অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত অর্থের বিবরণ জানানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ চিঠি দেওয়ার পর সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রথমে ভারতকে জানিয়েছিল যে নীতি অনুযায়ী তারা ভারতীয়দের গচ্ছিত রাখা অর্থের বিবরণ দিতে অপারগ। পরে অবশ্য সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই অর্থ উদ্ধারে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয় ভারতকে।

No comments

Powered by Blogger.