জঙ্গি হানায় বুরকিনা ফাসোয় নিহত ২৩

রাজধানী ওউয়াগাদোউগুর স্প্লেনডিড হোটেলে
জঙ্গি হামলার পর বাইরে সতর্ক অবস্থানে ফরাসি
বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা l ছবি: এএফপি
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোয় গতকাল শনিবার জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার আঞ্চলিক শাখার হামলায় ১৮টি দেশের অন্তত ২৩ নাগরিক নিহত হয়েছে। জঙ্গিরা রাজধানী ওউয়াগাদোউগুর দুটি হোটেল ও একটি রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে অবরোধ করে রাখে। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একটি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কয়েক ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে ১৫০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করেন। খবর এএফপি ও বিবিসির।
রাজধানী ওউয়াগাদোউগুর ‘স্প্লেনডিড হোটেলে’ গত শুক্রবার রাতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। আল-কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। জঙ্গিরা ওই হোটেলের পাশে কাপুচিনো নামের আরেকটি রেস্তোরাঁয়ও হামলা চালায়। জঙ্গিদের কবল থেকে এক পর্যায়ে স্প্লেনডিড হোটেল ও কাপুচিনো রেস্তোরাঁ মুক্ত হলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইয়াইবি নামের আরেক অবরুদ্ধ হোটেলে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলছিল।
বুরকিনা ফাসোর নিরাপত্তাবিষয়কমন্ত্রী সিমোন ক্যামপারো বলেন, ‘হোটেল ও কাপুচিনো রেস্তোরাঁয় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান শেষ হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ১৫০ জিম্মির মধ্যে ৩৩ জন আহত হয়েছেন।’ আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দেশের গণপূর্তমন্ত্রী ক্লিমেন্ট সোয়াদোগেও রয়েছেন বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অন্তত চার জঙ্গি নিহত হয় বলে বিবিসির খবরে জানানো হয়। এদের মধ্যে দুজন নারী বলে জানা গেছে। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন আরব ও দুজন আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ। আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।
সাবেক ফরাসি উপনিবেশ বুরকিনা ফাসোয় এ হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ।
বন্দুকধারীরা স্প্লেনডিড হোটেল ও কাপুচিনো রেস্তোরাঁয় কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েকজন জানান, জঙ্গিরা প্রতিটা জিম্মির কাছে যায়। তাদের শরীর স্পর্শ করে। কেউ নড়াচড়া করলে তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়।
হোটেলে হামলা শুরু হওয়ার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পুরো হোটেল এলাকা ঘিরে ফেলেন। শনিবার ভোর রাত থেকে তাঁরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
উদ্ধার হওয়া বুরকিনা ফাসোর নাগরিক ইয়ানিক সাওয়াদোগো সিএনএনকে বলেন, হামলার পর সবাই ভয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। হোটেলের সর্বত্র রক্ত ছড়িয়ে আছে।
ওউয়াগাদোউগু নগরে থাকা পশ্চিমা, বিশেষ করে ফরাসি নাগরিকদের কাছে এ দুটি স্থানই বেশ প্রিয়। দুটি স্থানে দেশটিতে থাকা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের যাতায়াত রয়েছে। স্প্লেনডিড হোটেলের প্রধান রবার্ট স্যাংগারে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে বলেন, হামলার প্রথম দিকেই অন্তত ২০ জন নিহত হয়।
প্রথম দফার অভিযান শেষ হওয়ার সময়ই খবর পাওয়া যায়, কয়েকজন হামলাকারী পাশের আরেক হোটেল ইয়াইবিতে অবস্থান নিয়েছে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। চতুর্থ জঙ্গি সেখানেই মারা যায়।
এর আগে বুরকিনা ফাসোর যোগাযোগমন্ত্রী রেমি ড্যানজিনিউ বলেন, ছয় থেকে সাতজন বন্দুকধারী স্প্লেনডিড হোটেল আক্রমণ করেছে। হামলাকারীরা কয়েক দিন ধরেই হোটেলে অতিথি হিসেবে থাকছিল।
আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত একিউআইএম গত বছরের নভেম্বরে আফ্রিকার আরেক দেশ মালির রাজধানী বামাকোতে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে।
স্প্লেনডিড হোটেল মুক্ত হওয়ার পর বুরকিনা ফাসোর সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোচ মার্ক ক্রিশ্চিয়ান কাবেরি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গত বছর এক সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটিতে ২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ব্লেজ কমপাওরে উৎখাত হন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক সিনথিয়া ওহায়িওন হামলার পর বলেন, দেশটিতে এখনো একধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। ঠিক এই সময়ে এমন হামলা ইঙ্গিতবাহী।
বিশ্লেষক ওহায়িওন বলেন, পাশের দেশ মালি ও নাইজারের সঙ্গে বুরকিনা ফাসোর দীর্ঘ সীমান্ত আছে। সেখানে সশস্ত্র নানা দলের উপস্থিতি আছে।

No comments

Powered by Blogger.