বারকিনা ফাসোর হোটেলে আল কায়দার তাণ্ডব

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বারকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুর একটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দার হামলায় ১৮টি দেশের অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। হামলাকারীদের হাতে জিম্মি ১২৬ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। দেশটির তথ্যমন্ত্রী রেমিস দাঁদজিনৌ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে এএফপির সাংবাদিকসহ দেশটির শ্রমমন্ত্রী ক্লিমেন্ট সোয়াদগু রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ হামলায় অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক দল বলছে, সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দা ইন ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম) হামলার দায় স্বীকার করেছে। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও ডেইলি মেইলের।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওয়াগাদুগুর বিলাসবহুল স্পে­নডিড হোটেলে আল কায়দার স্থানীয় শাখার বেশ কয়েকজন মুখোশ পরিহিত বন্দুকধারী হামলা চালায়। এর আগে হোটেলটির সামনে গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই হোটেলে জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও পশ্চিমা দেশ থেকে আসা পর্যটকরা থাকেন। এ সময় হামলাকারীরা শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। জিম্মিদের মুক্ত করতে সেখানে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী কাপুচিনো রেস্তোরাঁতেও হামলার খবর পাওয়া যায়। দুই স্থানে অভিযান শেষ হলে নিকটবর্তী হোটেল ইয়েবিতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) অভিযান চলছিল। জঙ্গিরা পালিয়ে থাকতে পারে- এমন আশংকায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযান চালাচ্ছে।
বারকিনা ফাসোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন কম্পাওরে রয়টার্সকে বলেন, ‘স্পে­নডিড হোটেল এবং নিটকবর্তী কাপুচিনো রেস্তোরাঁয় অভিযান শেষ হয়েছে। ১২৬ জন জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৩ জন আহত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আরব ও দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘দুই স্থান মুক্ত করা হলেও জঙ্গিদের খোঁজে নিকটবর্তী হোটেল ইয়েবিতে এখনও অভিযান চলছে।’ ডেইলি মেইল জানায়, অভিযানে বারকিনা ফাসোর বাহিনীকে সাহায্য করেছে ফরাসি বাহিনী। ফ্রান্সের স্পেশাল ফোর্সের ৩০ জন সেনা ও একজন মার্কিন সেনা ওই হোটেলে অপারেশন চালায়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফরাসি বাহিনী বারকিনা ফাসো বাহিনীকে সহযোগিতা করছে। প্রেসিডেন্ট ওলান্দ বারকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট কাবরেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’ স্পে­নডিড হোটেলের অবস্থান বারকিনা ফাসোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা হোটেলের কাছে কাপুচিনো ক্যাফেতেও ঢোকে।
ওই ক্যাফেটি সাধারণত জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও পশ্চিমা নাগরিকরা ব্যবহার করেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক কর্মীও হামলার সময় ওই ক্যাফেতে ছিলেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি ১৮টি দেশের অন্তত ২৩ ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া চার হামলাকারী নিহত, যাদের মধ্যে দু’জন নারী বলেও জানিয়েছে বিবিসি। আল কায়দা ইন ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এরা জঙ্গি নেতা মুখতার বেল-মুখতারের অনুসারী হতে পারে বলে বিবিসি ধারণা করছে। বারকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রোচ কাবরে শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে পৃথক একটি ঘটনায় বারকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে অস্ট্রিয়ার এক দম্পতিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত নভেম্বরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন এক অভিজাত হোটেলে বিদেশীসহ ১৭০ জনকে জিম্মি করে বন্দুকধারীরা। ৯ ঘণ্টা পর এ জিম্মি দশার অবসান ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ২৭ জন নিহত হন। ওই হামলার দায়দায়িত্বও স্বীকার করে জঙ্গি দল আল কায়দা ইন ইসলামিক মাগরেব।

No comments

Powered by Blogger.