কেজরিওয়ালের অফিসে সিবিআই হানা by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতে কেন্দ্রের সঙ্গে দিল্লি সরকারের দ্বন্দ্ব এক নতুন মোড় নিল সিবিআই হানাকে কেন্দ্র করে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরাসরি আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সংসদও উত্তাল হলো। বিজেপি ও সরকার ঘটনার সাফাই দিয়ে বলল, প্রধানমন্ত্রীকে কটু কথা বলার জন্য কেজরিওয়ালের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
আজ মঙ্গলবার ভোর হতে না হতেই সিবিআইয়ের একটি দল দিল্লি সরকারের সচিবালয়ে রাজ্যের প্রধান সচিবের অফিসে হানা দেয়। সচিবালয় সিল করে দেওয়া হয় যাতে মুখ্যমন্ত্রীও ওই সময়ে ঢুকতে না পারেন। খবর পেয়েই কেজরিওয়াল টুইট করে সিবিআই হানার কথা জানিয়ে দেন। টুইটে তিনি মোদিকে ‘কাপুরুষ ও মানসিক বিকারগ্রস্ত ’ বলে আখ্যা দেন। বলেন, মোদি রাজনৈতিক মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে কাপুরুষের মতো আচরণ করছেন। এটা নিছকই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা।
সিবিআই হানা দেয় প্রধান সচিব রাজেন্দ্র কুমারের অফিসে। অভিযোগ, একটি কম্পিউটার সংস্থাকে তিনি গত কয়েক বছর ধরে অন্যায় সুবিধে পাইয়ে অসৎ উপায়ে প্রচুর অর্থ রোজগার করেছেন। সিবিআইয়ের দাবি, তাঁর অফিস ও বাড়ি থেকে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা নগদ ও তিন লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করেছে। তারা জানায়, সারা দেশে মোট ১৪টি স্থানে তারা এই অভিযান চালিয়েছে।
সিবিআই ও সরকারের দাবি উড়িয়ে দিয়ে কেজরিওয়াল বলেছেন, তাঁকে না জানিয়ে তাঁর সচিবের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালানো বেমানান। সরকার তাঁকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি। ঔদ্ধত্য ছাড়া এ আর কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুই​ট করেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সিল করে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। আমি হতবাক।’
বেলা ১১টার দিকে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্র তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধীরা সরকারকে কোণঠাসা করে। জবাবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, সিবিআই একজন অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে তল্লাশি চালানো হয়নি। অভিযোগও বেশ পুরোনো, আগের সরকারের আমলের। বিজেপি নেতারা বরং কেজরিওয়ালের সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করায় তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এক বছর আগে দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে কেজরিওয়ালের খিটমিট লেগেই আছে। অফিসার নিয়োগ থেকে শুরু করে পুলিশি নির্দেশ, সর্বত্রই তিনি বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। রাজধানী হওয়ার সুবাদে দিল্লি পূর্ণ রাজ্য নয়। দিল্লির পুলিশ ও জমির অধিকারও কেন্দ্রের। সেই কারণে গত এক বছর ধরে কেজরিওয়ালের সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাত লেগেই রয়েছে। আজকের ঘটনা সেই সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা। যাঁর অফিস ও বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালায়, সেই রাজেন্দ্র কুমারের নিযুক্তিও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। পছন্দের সেই অফিসারের বিরুদ্ধে তল্লাশিকে কেজরিওয়াল তাই কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে মনে করছেন।

No comments

Powered by Blogger.