ছাত্র বিক্ষোভে স্থবির ঢাকা

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ছাত্র বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা। রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী, বাড্ডা ও উত্তরায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে ওইসব এলাকার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপ্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। সকালে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ভ্যাটবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রামপুরা ব্রীজ অতিক্রম করে তারা বাড্ডা-রামপুরা সড়কে অবস্থান নেয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে প্রগতি সরনীতে অবস্থান নিয়েছে নর্থ সাউথ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বনানী মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানীর ধানমন্ডিতেও সড়ক অবরোধ করেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সড়কে নেমে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় ধানমন্ডি ২৭নম্বর এর মোড়ে অবস্থান নেয় তারা। এতে ওই এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে উত্তরা এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে আবদুল্লাহপুর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলে বিঘ হচ্ছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির আশংকায় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা বাধা দেবেন না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা দমন করা হবে।
ভ্যাট পুনর্বিবেচনা করতে সরকার অনমনীয় নয়-অর্থমন্ত্রী
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার দ্বার খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, আমি আশা করি, তারা এ বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করবে। রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আলোচনার পথ রুদ্ধ নয়, ভ্যাট পুনর্বিবেচনা করতে সরকার অনমনীয় নয়। আমরা পুনর্বিবেচনা তো সব সময় করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধা পর্যালোচনায় বেতন কমিশন কাজ শুরু করবে বলেও তিনি জানান। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাট নিয়ে আমরা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। 
ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে সরকারের ভিত কেঁপে উঠবে’ -বদরুদ্দোজা চৌধুরী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে সরকারের ভিত কেঁপে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর  একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এর আগে শিক্ষার ওপর করারোপের চেষ্টা কোন সরকারই করেনি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি, ইতিমধ্যে অনেক বিলম্ব হয়েছে, আর বিলম্ব নয়, শিক্ষার উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করুন। না হলে এর জন্য রাজনৈতিক খেসারত দিতে হবে। বিকল্পধারা সভাপতির প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বি. চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রগলভতা সুবিদিত। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ওপর ভ্যাট এবং শিক্ষকদের মর্যাদার ওপর তীর্যক আক্রমণ এর কোনটাই সরকারের পক্ষে যাবে না। ছাত্ররা যেভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এবং অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই বিক্ষুব্ধ, তা যে কোন সাধারণ বুদ্ধির লোক বুঝতে পারলেও অর্থমন্ত্রী তা উপলব্ধি করতে পারেন নাই এবং ভবিষ্যতেও পারবেন বলে মনে হয় না। সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীর এই ভুল পরামর্শ এবং আত্মঘাতী নীতির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।  বি. চৌধুরী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান এবং একই সঙ্গে ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হলে সরকারের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠতে পারে। শুধুমাত্র কিছু আমলাকে অতিতোষণের নীতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষা, শিক্ষক ও ছাত্রদের অবহেলা করলে সরকার মহাবিপদের সম্মুখীন হবে। 
মুহিতের পদত্যাগ দাবি নির্মলেন্দু গুণের
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট চাপিয়ে দেয়ার প্রতিক্রিয়া কতটা তীব্র হতে পারে- সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক ধারণা দিতে পারেন নি বরং ভুল ধারণা দিয়েছেন বলে মনে হয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ফরাস উদ্দিন সাহেব ভ্যাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বেতনের ওপর ভ্যাট চাপাবে না। তাঁকে ধন্যবাদ। মুহিত সাহেবকে পদে রেখে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। হয়তো আরও অবনতিই হবে। সুতরাং আর বিলম্ব নয, মুহিত সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে দ্রুত বিদায় করুন। মুহিত সাহেব নিজেও পদত্যাগ করতে পারেন। তাতে তাঁর কিছুটা হলেও সুনাম হবে। তাঁর অসম্মান আমরা এড়াতেই চাই। এটাই তাঁর জন্য শেষ সুযোগ। 

No comments

Powered by Blogger.