খানাখন্দ ও নির্মাণসামগ্রীতে ভরা বনানী ৪ নম্বর পানির পাম্প মাঠ, বেহাল অবস্থা by সামছুর রহমান

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মহানগরের বিভিন্ন এলাকাতে উন্নয়নমূলক কাজ করে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনই বিভিন্ন পার্ক ও খেলার মাঠে দীর্ঘদিন ধরে রাখা হয় উন্নয়নকাজের নির্মাণসামগ্রী। সে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন বনানী ৪ নম্বর পানির পাম্প মাঠ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বনানী এলাকার বিভিন্ন সড়কের পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং ফুটপাত-সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। চলতি বছরের মে মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর। ডিএনসিসি এক বছরের জন্য প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বনানীর ৪ নম্বর পানির পাম্প মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে পানিনিষ্কাশনের পাইপ পড়ে আছে। ভাঙাচোরা পুরোনো ইট মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একপাশে শ্রমিকেরা লোহার রড দিয়ে কাজ করছেন। মাঠের মাঝখানে থাকা আমগাছের নিচে ইট ও বালু রাখা হয়েছে। তিনটি বিশাল ট্রাকে বালু তোলা হচ্ছে।
মাঠের এক কোণে নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের থাকার জন্য বাঁশ-টিন দিয়ে একাধিক ঘর বানানো হয়েছে। সেখানেই চলছে রান্না। আর নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্যও কয়েকটি ঘর তোলা হয়েছে। মাঠের মাঝখানে থকথক করছে কাদা। জায়গায় জায়গায় গর্ত। এটি যে একটা মাঠ সেটা এখন আর বোঝার কোনো উপায় নেই।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ডিএনসিসির পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজের স্বার্থেই নিয়েছে। খালি জায়গা তো সে রকম নেই। রাস্তার ওপরে নির্মাণসামগ্রী রাখা যায় না। সাময়িক অসুবিধা হবে, তারপরে মাঠ ছেড়ে দিবে।’
নাম না প্রকাশের শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মূলত শ্রমিকদের থাকার ঘর বানিয়েছি। আর যেসব রাস্তায় কাজ হয়েছে সেখানকার পুরোনো সামগ্রীগুলো সিটি করপোরেশন এখানে রাখছে। অন্য এলাকার রাস্তা মেরামতের দরকার হলে সিটি করপোরেশন এখান থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যায়।’
মাঠটির সীমানা দেয়ালের ভেতরে চারপাশ দিয়ে জনগণের হাঁটাচলার জন্য হাঁটাপথ ছিল। মে মাসের শেষে নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য সেই ‘ওয়াকওয়ে’ তুলে ফেলা হয়েছে। মাঠের প্রবেশমুখেই সেই ওয়াকওয়ের অংশবিশেষ পড়ে আছে।
তবে এখনো দুটি বসার জায়গা অক্ষত আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকায় এমনিতেই মাঠ-উদ্যান কম। তার মধ্যে সিটি করপোরেশন মাঠে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখছে। সিটি করপোরেশনের এসব নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য বিকল্প কোনো জায়গা ভাবা উচিত। নাগরিক-সুবিধা পেতে হলে জনগণকে ভোগান্তি সহ্য করতে হবে এটা ঠিক নয়।
মাঠটিতে শুধু যে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে তাই নয়। মাঠের একপাশে আছে কমিউনিটি পুলিশের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। আছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের একটি কার্যালয়।
সিটি করপোরেশন তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাঠ ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয় মাঠ ব্যবহারের সময় বাড়িয়েছে, না হয় তারা মাঠ ছেড়ে দেওয়ার পরে আর সংস্কার করেনি। মাঠগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে তারেক বিন ইউসুফ বলেন, ‘কিছু জায়গায় মাঠ ব্যবহার নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আশা করছি এ ক্ষেত্রে এমন হবে না। পার্কগুলো পরিবেশ সার্কেলের অধীনে। আমরা ঢাকার পার্কগুলোকে ইকোপার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি।’

No comments

Powered by Blogger.