বনশ্রী–আফতাবনগরে: বাঁশের সাঁকোই ভরসা by সামছুর রহমান

বনশ্রী থেকে আফতাবনগরের খাল পারাপারের জন্য ​বাঁশের
সাঁকোই এলাকাবাসীর ভরসা। এর মধ্যে কয়েকটি সাঁকো
ভেঙে পড়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে -আশরাফুল আলম
রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর আবাসিক এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে রামপুরা খাল। বাসিন্দাদের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার ভরসা কয়েকটি বাঁশের সাঁকো। নড়বড়ে এসব সাঁকোর কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর দাবি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, বনশ্রী এ-ব্লক থেকে মেরাদিয়া হাট পর্যন্ত আটটি বাঁশের সাঁকো। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি সাঁকোই ভেঙে গেছে। এগুলোর দুটির মাঝখান থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে আর একটি সাঁকোর এক পারের অংশ নেই।
অন্তত ১০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগেও বনশ্রী এ-ব্লক থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত আটটি বাঁশের সাঁকোই ভালো ছিল। স্থানীয় কিছু লোক বাঁশের এসব সাঁকো তৈরি করে ব্যবসা করতেন। প্রতিবার সাঁকো পার হতে জনপ্রতি দুই টাকা করে দিতে হতো।
এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ পার হতো। মাসে কয়েক লাখ টাকার ব্যবসা হতো। এই পারাপারের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সাঁকোর মালিকেরা নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক মাস আগে মারামারি ঘটনাও ঘটে। তখন কয়েকটি সাঁকো ভেঙে ফেলা হয়। এরপর স্থানীয় প্রশাসন ও আবাসিক সমিতি মিলে তিনটি সাঁকো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সমিতির তত্ত্বাবধানে থাকা এসব সাঁকো পারাপার হতে লোকজনকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।
বনশ্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির গতকাল বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো কোনো স্থায়ী সমাধান না। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। বেইলি ব্রিজ হলে গাড়ি চলতে পারত। দুই পারের লোকজনেরই সুবিধা হতো।’
দেখা গেছে সাঁকোগুলোর অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। বাঁশের তৈরি এসব সাঁকো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। মেরাদিয়া বাজারের সামনের সাঁকোটির মাঝখানে ভেঙে পড়ায় নতুন করে বাঁশ লাগানো হয়েছে। দুই কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে তিনটি সংযোগ সাঁকো থাকায় লোকজন নিজেদের সুবিধামতো জায়গা দিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন।
আফতাবনগর ও বনশ্রীর দুই পারেই আবাসিক এলাকা। বনশ্রীতে আছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আফতাবনগর থেকে শিক্ষার্থীদের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে একাধিকবার সাঁকো পার হতে হয়। আফতাবনগরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বনশ্রী থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেও সাঁকো পার হতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির আহমেদ বলেন, অনেক দূরে দূরে সাঁকো আর সেগুলোতে কোনো যানবাহন চলে না। প্রতিদিন বাচ্চারা স্কুলে যায় অনেকটা পথ হেঁটে। সাঁকো পার হতে হয় বলে দুশ্চিন্তাও লাগে।
আফতাবনগরে গড়ে ওঠা জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, রামপুরা খালটি ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা)। বনশ্রী ও আফতাবনগরে সংযোগ স্থাপন করতে তিনটি স্থায়ী সেতু করার অনুমোদন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দিয়েছে। স্থায়ী কিছু করার ব্যাপারে ওয়াসাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ওয়াসার সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘রামপুরা খালে স্থায়ী কোনো সেতু নির্মাণের প্রকল্প আপাতত ওয়াসার নেই। রামপুরা খাল দিয়ে অনেক এলাকার পানি প্রবাহিত হয়। যোগাযোগের সুবিধার্থে সেতু হলেও তা যেন পানির প্রবাহে কোনো সমস্যা না করে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেতু অবশ্যই সিঙ্গেল স্প্যানের (এক খামের) হতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.