ইউরোপে সংকটে শরণার্থীরা

গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় আইদোমেনি শহরের কাছাকাছি রেললাইন
ধরে হাঁটছে একটি পরিবার। সীমান্ত পেরিয়ে মেসিডোনিয়ায়
যেতে চাইলেও তাদের বাধা দেয় সে দেশের পুলিশ। ওই
সীমান্তে হাজারো শরণার্থী ও অভিবাসী খোলা আকাশের
নিচে গত শুক্রবার রাত কাটিয়েছে।। এএফপি
ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে চলমান সংকট ক্রমশ গভীর হচ্ছে। শরণার্থীদের ভাগাভাগি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হলেও কয়েকটি দেশের অভিযোগ, তাদের কাঁধে তুলনামূলক বেশি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিবাসী সমস্যা মোকাবিলায় মেসিডোনিয়ার সরকার গত বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। আর স্লোভেনিয়া মুসলিম শরণার্থীদের নিতে চাইছে না। খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির। বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, গ্রিস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে অভিবাসীদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের লক্ষ্যে গতকাল শনিবারও অন্তত দুই হাজার শরণার্থী মেসিডোনিয়া সীমান্তে পৌঁছায়। তাদের প্রবেশে মেসিডোনিয়ার পুলিশ ও সেনারা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে শুক্রবার রাতে হাজারো মানুষ ওই সীমান্তে প্রবল বৃষ্টি ও ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাতে বাধ্য হয়।
তাদের অধিকাংশই সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাকের নাগরিক। বিবিসির খবরে বলা হয়, মেসিডোনিয়ার সীমান্তে অভিবাসীদের লাঠিপেটা করা হলেও দেশটির সরকার তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওই কাজের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। সেখানে আশ্রয়প্রার্থীরা যে রকম আচরণ পেয়েছে, তা সাধারণত দাঙ্গাবাজেরাই পেয়ে থাকে বলে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে। কিন্তু মেসিডোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা পোপোস্কি গতকাল বলেন, প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ প্রবেশ করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে। তবে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের সন্ধানে বিপজ্জনক উপায়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস ও ইতালির উপকূলে যাচ্ছে। গন্তব্য হিসেবে তাদের প্রথম পছন্দ ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, জার্মান সরকার চলতি বছর সাড়ে সাত লাখ মানুষের কাছ থেকে আশ্রয়ের আবেদন পাবে বলে ধারণা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সীমান্তবিষয়ক সংস্থা ফ্রন্টেক্স গত মঙ্গলবার জানায়, গত মাসে ইইউ সীমান্তে এক লাখ সাত হাজার অভিবাসী পৌঁছানোর রেকর্ড হয়েছে। কেবল গত সপ্তাহেই গ্রিস উপকূলে পা রেখেছে ২০ হাজার ৮০০ শরণার্থী। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরনাদ ক্যাজনভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, এত বেশি অভিবাসীর ইউরোপে প্রবেশের বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী অক্টোবরে আলোচনায় বসবেন।
অভিবাসী না শরণার্থী: কাতারভিত্তিক টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদ প্রতিষ্ঠান আল-জাজিরা বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের উপস্থাপক ও লেখকেরা গ্রিস উপকূলে আশ্রয়প্রার্থী মানুষের খবর পরিবেশনের সময় এখন থেকে আর ‘অভিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করবেন না। এ ক্ষেত্রে ‘শরণার্থী’ শব্দটিই বেশি উপযোগী। কারণ, এসব শরণার্থীর বেশির ভাগই নিজ দেশে চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে ইউরোপমুখী হচ্ছে। ‘অভিবাসী’ শব্দটির সাধারণ অর্থ: মৌসুমি কাজের খোঁজে বা উন্নততর জীবনযাত্রার সন্ধানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ। অন্যদিকে জাতিসংঘ নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘শরণার্থী’ শব্দটির অর্থ: বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা এবং কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের বা মতাদর্শের অনুসারী হওয়ার কারণে দেশান্তরি ব্যক্তি।

No comments

Powered by Blogger.