মিরপুর ১ নম্বরের চিড়িয়াখানা রোড- পিকআপস্ট্যান্ড, বাজার কী নেই! by সামছুর রহমান

চিড়িয়াখানা রোডের এক পাশে রয়েছে
রেন্ট–এ–কারের দোকান ছবি l প্রথম আলো
চি​ড়িয়াখানা রোডের প্রবেশমুখের এক পাশে সারি করে রাখা
হয়েছে পিকআপ ভ্যান। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
সড়কের এক পাশে পিকআপ ভ্যানের স্ট্যান্ড। আরেক পাশে ভাড়ায় চালিত (রেন্ট-এ–কার) গাড়ির সারি। সড়কটি ধরে একটু এগোলেই ফুটপাত-সড়কের কিছু অংশজুড়ে বসেছে স্থায়ী-অস্থায়ী বাজার। সড়কটির নাম চিড়িয়াখানা রোড।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের সনি সিনেমা হল-সংলগ্ন এই সড়কের প্রবেশমুখের এক পাশে সারি করে রাখা হয়েছে ১০-১২টি ছোট-বড় পিকআপ ভ্যান। পিকআপের সারি সড়কের প্রায় অর্ধেকজুড়ে। ফুটপাতে টিন-বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো হয়েছে ঢাকা মহানগর পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা মহানগর মিনি পিকআপ মালিক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়।
এই এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. শায়কুর রহমান। তিনি জানালেন, দখলের কারণে এই সড়কে চিড়িয়াখানাগামী যানবাহনগুলোর চলাচল ব্যাহত হয়। প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। ফুটপাতে হাঁটারও উপায় নেই। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রী-পথচারীদের।
ঢাকা মহানগর মিনি পিকআপ মালিক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে কয়েকজন বসে ছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিকআপ ভ্যানের একজন মালিক বলেন, এখানে পিকআপ ভ্যানের ব্যবসা অনেক দিন ধরে। তাঁর দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী, পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করছেন।
পিকআপ ভ্যান রাখার জায়গার পাশে গড়ে উঠেছে নার্সারি, জুতার দোকান। কিছু দূরে ঈদগাহ মাঠের দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাত-সড়কের কিছু অংশে গড়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী বাজার। দেখা যায়, ফুটপাতে গড়ে ওঠা স্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস, মুরগি আর মুদিসামগ্রী। সড়কের কিছু অংশে কয়েকজন পসরা নিয়ে বসেছেন চৌকি পেতে, কয়েকজন পলিথিন বিছিয়ে। বিক্রি হচ্ছে সবজি, ফল, মাছ।
অন্তত ১০ জন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন তাঁদের প্রত্যেককে ৩০-৪০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা তোলা হয় সমিতির পক্ষ থেকে। সমিতির একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে টাকা তুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কিছু দেওয়া হয়। আর বাকি টাকা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের দেওয়া হয়।’
সনি সিনেমা হলের সামনে সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে রেন্ট-এ কারের কয়েকটি দোকান। গাড়ি রাখার আলাদা জায়গা না থাকায় সড়কের কিছু অংশে তা সারি করে রাখা। এসব দোকানের মালিক সমিতি থাকলেও কোনো কমিটি নেই। কয়েকজন মিলে সমিতি চালান। তাঁদের একজন চৌধুরী অটো এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জায়েদুল হক বলেন, ‘এখানে ৩০টির মতো দোকান আছে। সিটি করপোরেশনের লিখিত অনুমতি না থাকলেও অনেক দিন ধরে এখানে ব্যবসা করায় সবারই আমাদের প্রতি সুনজর আছে।’
সড়ক-ফুটপাতগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্পদ কর্মকর্তা এম এম মহিউদ্দিন কবীরের মুঠোফোনে গতকাল একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরিচয় জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব মেলেনি।
এলাকাটি ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী টিপু সুলতান। দখলের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকেও পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে মিরপুর থানার টহল পরিদর্শক কামাল হোসেন মুঠোফোনে গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন স্থানীয় লোকজন বাজারটি বসিয়েছেন। বাজার সরাতে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।
পিকআপ ভ্যানের স্ট্যান্ড ও রেন্ট-এ কারের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আপাতত খেলা নিয়ে ব্যস্ত আছি। খেলা শেষ হলে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.