পেটানোর পর ক্ষমা চেয়ে প্রেমিকার কাছে চিঠি

প্রিয়, আমি আসলে এমন নই। আমি এমনটা চাইনি। আমায় ক্ষমা করে দিও। এমনটা আর কখনই হবে না, কথা দিলাম। প্রেমিকার অভিমান ভাঙাতে এমন অনেকেই করেন। তবে এটি কি জানেন, স্ত্রী বা প্রেমিকাকে নির্মমভাবে প্রহারের পরও অনেক স্বামী বা প্রেমিকা ক্ষমা চেয়ে চিঠি, এসএমএস বা ই-মেইল পাঠান? ঠিক এমনটিই ঘটেছে র‌্যাকুয়েলের ক্ষেত্রে। তাকে পেটানোর পর ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেন তার প্রেমিক। আকুতি-মিনতি ঝরে পড়া চিঠিগুলো দেখে গলে যান র‌্যাকুয়েল। আবারও ফিরে যান প্রেমিকের কাছে। এর ঠিক পাঁচ সপ্তাহ পর আবারও র‌্যাকুয়েলের গায়ে হাত তুলেন তার প্রেমিক। এবার তিনি আর ক্ষমা চাইবার সুযোগ দেননি প্রেমিককে। প্রেমিকের হাতে নির্দয় প্রহারের পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
নিজ সঙ্গীদের হাতে সহিংস আক্রমণের শিকার পেরুর নারীদের ২৫টি ঘটনা নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ের নাম ‘পেরু, ডোন্ট ডাই ফর মি’। সে বইয়েই প্রকাশিত হয়েছে র‌্যাকুয়েলের চিঠিটি। শুধু চিঠিই নয়, বইয়ে স্থান পেয়েছে ঘাতক বা প্রহৃতা প্রেমিক/স্বামীদের অনুনয়-অনুরোধ মাখা বিভিন্ন ইমেইল, এসএমএসও। দুই অংশে লেখা বইটিতে চিঠি, ই-মেইল ও এসএমএস-এর পরেই বর্ণিত হয়েছে, ওই ঘটনাগুলোর পরের গল্পগুলো। প্রথম অংশে হুবহু চিঠি, মেইল ও এসএমএস-এর ছবি হুবহু ছাপানো হয়েছে। অনেকগুলো গল্পই ছিল র‌্যাকুয়েলের গল্পের মতো। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন বইয়ের খবর। সেখানে দেখা গেছে, চিঠিতে ‘শপথ করে বলছি, আমি আসলে এমন নই’, ‘আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটা করিনি’ এবং ‘আমি এমনটা আর করবো না’- এ বাক্যগুলো স্থান পেয়েছে বেশি। বারবার প্রেমিকাকে বাগে আনতে এমন শব্দ চয়ন করেছে প্রেমিকরা। বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশসমূহের একটি লাতিন আমেরিকার দেশ পেরু। প্রায়ই সেখানে নারীরা সঙ্গীর সহিংস আচরণের শিকার হন। সরকারি তথ্যমতে, গত ছয় বছরে পেরুতে নিজ প্রিয়তমের হাতে খুন হয়েছেন ৬৮০ জন নারী। এ ধরনের অপরাধের জন্য অবশ্য পেরু সরকার কঠোর শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৫ সালে একটি গবেষণা করে। সেখানে দেখা গেছে, পেরুর ৬১ শতাংশ নারীই তার পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এটি ছিল গবেষণা করা ১০টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ হার। বাকি ৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এছাড়া গবেষণা হয়েছে ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, জাপান, নামিবিয়া, সামোয়া, সার্বিয়া অ্যান্ড মন্টেনিগ্রো, থাইল্যান্ড ও তাঞ্জানিয়ার নারীদের ওপরও।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, পেরুর ৪৯ শতাংশ নারীই ‘মারাত্মক শারীরিক সহিংসতা’র শিকার হয়েছেন। তাদের প্রতি করা সহিংস আচরণের মধ্যে রয়েছে ঘুষি, লাথি, টানা-হেঁচড়া, হুমকি ও কোন কিছু দিয়ে করা আঘাত।
‘পেরু, ডোন্ট ডাই ফর মি’ ছবিটিতে চিত্রায়িত হয়েছে দেশটির নারীদের প্রতি এমন সহিংস আচরণের চিত্র। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন নোবেল বিজয়ী পেরুভিয়ান লেখক মারিও ভারগাস লোসা। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, এ সমস্যা সমাধানের নতুন পথ খোঁজার। কেননা, অনেক নারীই সোচ্চার হতে ভয় পায়। একই কথা বলছে বইটির সম্পাদনার কাজে জড়িত একজন। তিনি নারীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বইয়ে বর্ণিত হওয়া নারীদের বেশির ভাগই প্রহারের শিকার হয়েছেন। এদের অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ বা মারাও গেছেন।
বই থেকে দুটি গল্প
গিয়াকার্লো তার স্বামী অ্যান্ড্রিয়াকে লিখেছিলেন, তুমি জানো যে, আমি তোমাকে ভালবাসি। যদিও আমি একটি ভুল করে ফেলেছি। তবে এমনটা আর কখনই ঘটবে না। প্রেমিকের লেখা চিঠিতে মন নরম হয় অ্যান্ড্রিয়ার। কিন্তু ফিরে যাওয়ার পর সে প্রেমিকই টুলবক্স দিয়ে আঘাত করে থেঁতলে দেয় অ্যান্ড্রিয়ার মুখ।
ভিক্টর তার প্রেমিকা কার্লার কাছে লিখেছেন, আমি শুধু চেয়েছি যে, তুমি অনুধাবন করো, তুমিই কেবল আমার প্রেয়সী। আমি এটা ভেবে পাগল হয়েগিয়েছিলাম যে, তুমি কিভাবে আরেকজনের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারলে। আমি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি জানি, এমনটা আর কখনই হবে না। ঠিক এক বছর পর, কার্লা গর্ভবতী হন। এরপরই প্রেমিকের প্রহারে তার গর্ভপাত ঘটে। কার্লা আর কখনই সন্তান ধারণ করতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.