‘কাজের কাজে নেই আমেরিকা’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সত্যিকার অর্থে ভূমিকা রাখছে না যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতির চেয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই বেশি নাক গলাচ্ছে। তারা কাজের কাজে নেই। গতকাল র‌্যাডিসন হোটেলে ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেটস প্রধান ও অ্যাম্বাসেডর রয়েছেন, কানাডিয়ান হাইকমিশনার রয়েছেন। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু কখনোই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। অন্যদিকে, সবকিছু নিয়ে কথা বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশকে কিছুই দিচ্ছে না। আমাদের ৯৭ শতাংশ পণ্য সেখানে শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, যার পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, ১৬টি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া হবে। গত বছরের এপ্রিলেই আমরা তা অর্জন করি। কিন্তু আমাদের জিএসপি দেয়া হয়নি। গত অর্থবছরের মতোই আফ্রিকা এবং সাব সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোকে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাকে বলা হয়েছে শ্রমিকদের অধিকারে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার কথা। আমি বলেছিলাম, সব শর্তই আমরা পূরণ করেছি, তোমরা আমাদের জিএসপি সুবিধা দাও। কিন্তু আমেরিকা জানায়, এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিওটিএ) বিষয়। তখন আমিও তাদের বলি, শ্রমিক অধিকারের বিষয়টিতো তাহলে আইএলও ইস্যু। তোফায়েল আহমেদ জানান, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ভারত সব দেশেই আমরা দু-একটি পণ্য বাদে অন্য পণ্যে শুল্ক মুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকি। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে কোন ধরনের বাণিজ্যিক সুবিধা দিচ্ছে না।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যা হয়েছে, পরে তা ভুলে গিয়ে আমরা সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চেয়েছি। সে সময় নিক্সন বলেছিলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। তবে এখন আর বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়।
গতকাল শুরু হওয়া এ এক্সপো চলবে আজ বিকাল পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক ডেনিম উৎপাদক ও ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরতে এ এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডেলিগেটস প্রধান ও অ্যাম্বাসেডর পিয়্যার মাইয়াদোন, ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার বিনোইট পিয়্যার লারামি, বিজেএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজ উদ্দিন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, শত বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আজ বিশ্ববাজারে আবারও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
মোস্তাফিজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে ডেনিম শিল্পের প্রসারই এ প্রদর্শনীর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং এটি ভাল ব্যবসা চর্চায় উৎসাহ প্রদান এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
প্রদর্শনীতে আয়োজক বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, চীন, সান মারিনোর ২৫টি ডেনিম ও জিনস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্ট উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ফ্যাশন পেশাজীবী। প্রদর্শনীর পাশাপাশি দু’দিনব্যাপী এ এক্সপোতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চারটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
বর্তমানে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয়। বিশ্বের ৪০০টি ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বছরে ১৮০ মিলিয়ন পিস ডেনিম জিনস তৈরি করে। বাংলাদেশের ২৫টি ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৮৩৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। চলতি বছরের ১১-১২ নভেম্বর পরবর্তী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.