মানহীন সার্জিক্যাল পণ্য

দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিরাজ করছে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ- সেটা যেমন বাস্তব অর্থে তেমনি নীতি-নৈতিকতার দিক থেকেও। ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রীতিমতো গিনিপিগ ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। ভেজাল, মানহীন ওষুধ, ভুয়া চিকিৎসক, ভুয়া ক্লিনিক-হাসপাতাল- কী নেই এ খাতে? অসংখ্য অনিয়মের একটি অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সোমবার যুগান্তরে, যার শিরোনাম মানহীন সার্জিক্যাল পণ্যের ছড়াছড়ি সারা দেশে। জানা যায়, কোনো নীতিমালা ছাড়াই আমদানি করা হচ্ছে যেসব সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও পণ্য সেসবের মান যথাযথ নয়। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো আমদানি হচ্ছে এবং ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। যেসব রোগীকে অপারেশনের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তাদের কমবেশি সবারই অভিজ্ঞতা অসন্তোষজনক- এটা সবারই জানা। হরহামেশাই দেখা যায়, অপারেশনের আগে যখন রোগীদের এনেসথেসিয়া করা হয় ব্যথাহীনভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার জন্য, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা ব্যথাহীন হন না। ফলে যন্ত্রণাবিদ্ধ অস্ত্রোপচারের শিকার হন তারা। এর কারণ এনেসথেসিয়ার জন্য যে ইনজেকশন রোগীকে দেয়া হয় তা মানসম্পন্ন নয়। এসব মানসম্পন্নহীন পণ্যই আমরা আমাদের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করে চলেছি যুগের পর যুগ। স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার কিছুদিন পরেও আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে সরকারিভাবে সার্জিক্যাল পণ্য আমদানি করা হতো; ফলে সেগুলো মানসম্পন্ন না হওয়ার উপায় ছিল না। পরবর্তী সময়ে বেসরকারিভাবে এসব পণ্য আমদানির সুযোগে আমদানিকারকরা মানের চেয়ে মুনাফার পেছনে ছোটায় ক্রমান্বয়ে মানহীন পণ্য ছড়িয়ে গেছে দেশে।
চিকিৎসাকে বলা হয় সেবা খাত। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই সেবার মানসিকতা ও নৈতিকতার অধিকারী হওয়া উচিত। কিন্তু দেশে এই সেবা খাত পরিণত হয়েছে একটি বড় বাণিজ্য খাতে। ফলে মুনাফার নীতিতে সবাই পরিচালিত হওয়ায় মানহীনতাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এ খাতের স্বাভাবিক নিয়ম। এই মানহীনতার গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেরিতে হলেও সার্জিক্যাল পণ্য আমদানির মান বেঁধে দিতে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। যদিও একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক আশংকা প্রকাশ করেছেন, এর সঙ্গে জড়িত একটি বড় আর্থিক গ্রুপ এই নীতিমালা করতে দেবে না। তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এটি যাতে দ্রুত প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়, সরকারের সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দিয়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে।

No comments

Powered by Blogger.