সীতাকুণ্ডে পেট্রলবোমায় তিনজন দগ্ধ- ‘বুকের মানিকরে পোড়ায় দিছে’ by প্রণব বল

(সীতাকুণ্ডে গত মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ঝলসে গেছে আনোয়ারুল ইসলামের শরীর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাঁকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন মা রেহানা আক্তার l ছবি: প্রথম আলো) গত মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলার শেখপাড়া এলাকা। একটি পিকআপ লক্ষ্য করে পর পর তিনটি পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তেই ঝলসে যান চালক আনোয়ারুল ইসলামসহ (২০), বিক্রয়কর্মী ঝন্টু পাল (২৪) ও জিল্লুর রহমান (২২)। তাঁদের তিনজনের বাড়ি মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট এলাকায়। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। পাশাপাশি শয্যায় ঠাঁই হয়েছে আনোয়ার, ঝন্টু ও জিল্লুরের।
আনোয়ারের মা রেহেনা আক্তার ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। পাশে থাকা স্বজনকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, ‘আমার বুকের মানিকরে পোড়ায় দিছে তারা।’ টানাটানির সংসারে এই ছেলেই যে তাঁর বড় ভরসা। দুর্বৃত্তের ছোড়া বোমায় হঠাৎ ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তাঁর জীবনে। যে হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরতেন আনোয়ার, সে হাত-ই যে পুড়ে গেছে।
কথা হয় রেহেনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অন্ধ। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আনোয়ার বড়। তার আয়ে আমাদের ঘর চলে। জমিজমা নেই। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল।’
আনোয়ারের শরীরের ৯ ভাগ পুড়ে গেছে। ঝন্টু পালের ৩০ ভাগ ও জিল্লুরের ১২ ভাগ। ঝন্টুর হাত, মুখ, বুক পুড়ে গেছে। জিল্লুরেরও দুই হাত, বুক ও মুখ ঝলসে গেছে।
ঝন্টুর বড় ভাই বিপ্লব পাল ভাইয়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন। বিপ্লব লেখাপড়া করেন। ছোট ভাই ঝন্টুর আয়ে তাঁদের সংসার চলে। ঝন্টুর এমন অবস্থার কথা গতকাল বিকেল পর্যন্ত তাঁর মা কল্পনা পালকে জানানো হয়নি। বিপ্লব বলেন, ‘মা প্রেশারের রোগী। তাঁকে ভাইয়ের এই খবর জানানো হয়নি। এখন আমাদের সংসার কীভাবে চলবে জানি না। হয়তো আমাকে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হবে।’
জিল্লুরের মা মঞ্জুরা খাতুন ছেলে দগ্ধ হওয়ার খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়েন। হাসপাতালে দেখতে ছুটে আসতে চাইলেও স্বজনেরা তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে হাসপাতালে যেতে দেননি। জিল্লুরের খালাতো ভাই বাহার উদ্দিন জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট জিল্লুর। বড় ভাই কৃষিকাজ করেন। সংসারের দায়িত্ব জিল্লুরের কাঁধে। চার বোনের মধ্যে তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন এই পরিবারটি কীভাবে চলবে...।
বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মো. এস খালেদ জানান, তিনজনের মধ্যে ঝন্টুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেট্রলবোমা হামলা হওয়া পিকআপের পেছনে ছিলেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী বিক্রয়কর্মী রবিউল হাসান। ভাগ্য সহায় হওয়ায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন। হাসপাতালে এখন তিন সহকর্মীর শুশ্রূষা করছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রবিউল বলেন, ‘মিরসরাইয়ের বড় দারোগাহাট থেকে পণ্য নিয়ে আমরা সীতাকুণ্ড যাচ্ছিলাম। পন্থিছিলা আসার পর গাড়ির বাঁ দিক থেকে পর পর তিনটি পেট্রলবোমা মারা হয়। বাঁ দিকে ছিলেন ঝন্টুদা। তিনজনই দগ্ধ হন। আমি পেছন থেকে নেমে পড়ি। একটু পর আগুনে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়।’

No comments

Powered by Blogger.