মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান ইতিহাসের সর্বোচ্চ খরচের অনুসন্ধান

মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান ও এর আরোহীদের অনুসন্ধান অভিযানে বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে কয়েক কোটি ডলার। এ অভিযানে অংশ নিয়েছে ২৬টি দেশ। তারা বিমান, জাহাজ, সাবমেরিন ও উপগ্রহের মাধ্যমে সহায়তা করছে। গত এক মাসে এ অভিযানের ওপর খরচের বিষয়ে বার্তা সংস্থা একটি হিসাব সম্পন্ন করেছে।
তাতে দেখা গেছে, গত এক মাসে এ অভিযানে খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ভারত মহাসাগরে রয়েছে বেশ কিছু সামরিক জাহাজ। এ হিসাবটি করা হয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে। পেন্টাগনও এমন হিসাব করেছে। এর আগে ২০০৯ সালের মধ্য আটলান্টিকে বিধ্বস্ত হয় এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট এএফ ৪৪৭। সেটি উদ্ধারে সময় লেগেছিল দু’ বছর। ওদিকে মালয়েশিয়ার বিমান উদ্ধারে যে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচের কথা বলা হচ্ছে তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি অনেক কিছু। বৃটেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া যেসব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করছে সেগুলোর ব্যয় এতে ধরা হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে বেসামরিক বিমান, কয়েক শত মানুষের চাহিদা পূরণ, বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা বিশ্লেষক। বৃটেন তো অনুসন্ধানে পারমাণবিক শক্তি চালিত এইচএমএস টায়ারলেস নামে একটি সাবমেরিন দিয়েছে। এসব হিসাব এক করে আরও পরে সার্বিক খরচের একটি তালিকা দেয়ার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান  অঙ্গাস হাউজটন। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বারবারই বলেছেন, এ অভিযানে খরচ কোন ইস্যু নয়। মালয়েশিয়া সরকারের এক সূত্র বলেছেন, এয়ার ফ্রান্সের এএফ ৪৪৭-এর ব্লাক বক্স উদ্ধারে যে খরচ হয়েছিল তার দ্বিগুণ হতে পারে এ অভিযানের খরচ। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া মোট খরচের অর্ধেক খরচ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর হিসাব মতে, তাদের এইচএমএএস সাক্সেস জাহাজ মাত্র একদিন চালালে তাতে খরচ হয় ৫ লাখ ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এক্ষেত্রে গড়ে অস্ট্রেলিয়ার খরচ প্রতিদিন ৮ লাখ ডলার। হতে পারে তার চেয়েও বেশি। একথা বলেছেন এশিয়া প্যাসিফিক ডিফেন্স রিপোর্টার-এর সম্পাদক কিম বার্গম্যান। এর বাইরে রয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ২৩৯ আরোহী নিয়ে  এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইট নিখোঁজ হওয়ার পর চীন মোট ১৮টি জাহাজ, ৮টি হেলিকপ্টর ও তিনটি বিমান পাঠিয়েছে অভিযানে। নিখোঁজ বিমান উদ্ধারে কত খরচ হয়েছে বা হচ্ছে সে বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি  চীন। তারা শুধু বলেছে, তারা উদ্ধার অভিযানে উৎসর্গিত। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত দ্য গ্লোবাল টাইমস এক হিসাবে জানিয়েছে তাদের ইলুশিন-২-৭৬ নামের বিমান পরিচালনায় এক ঘণ্টায় জ্বালানি খরচ লাগে ১০ হাজার ডলারের। এর সঙ্গে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও ক্রুদের বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চীনের যুদ্ধজাহাজ যা ওই এলাকায় অভিযানে রয়েছে তা পরিচালনা করতে দিনে কমপক্ষে ১ লাখ ডলার লাগে। ওদিকে পেন্টাগন গত সপ্তাহে বলেছে, তারা এরই মধ্যে ৩৩ লাখ ডলার খরচ করেছে এ অভিযানে। ওদিকে অনুসন্ধানকারী দল নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পেতে তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে গত দু’তিন দিনে ব্লাক বক্সের মতো সিগন্যাল ধরা পরার পর আশান্বিত হয়ে ওঠেন সবাই। সোমবার পর্যন্ত চীন ও অস্ট্রেলিয়ার জাহাজ থেকে ওই সিগন্যাল ধরা পড়ে। কিন্তু তা আর পাওয়া যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.