সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকায় বাদ সাধবেন না হাসিনা

বাংলাদেশে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায় এমন সময়ে এলো যখন বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
জরিপে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষেও মত দিয়েছেন। শেখ হাসিনা অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যা বিএনপিকে নির্বাচন বয়কটে প্রলুব্ধ করতে পারে। যদি বিএনপি বয়কট করে তবে সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে এবং আগামী কয়েক মাস রাজপথে সহিংসতা চলবে। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে  সেনাবাহিনী চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করবে, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষা যাদের দায়িত্ব। সেনাবাহিনীর এমন ভূমিকায় বাদ সাধবেন না শেখ হাসিনা।

প্রভাবশালী বৃটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। শনিবারের মুদ্রণ সংস্করণে প্রকাশিতব্য এই প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যেই অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।  ‘বাংলাদেশ: মিউটিনি অ্যান্ড রিভেঞ্জ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বিডিআর সদস্যদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপিল নিষ্পত্তিতে কয়েক মাস লাগবে। তবে এই রায়ে শেখ হাসিনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়া যাবে। কারণ, বিদ্রোহীদের এই সাজা সেনাবাহিনীর মধ্যে তার অবস্থান সংহত করবে। দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দ্রুত পরীক্ষা হয়ে এসেছিল বিডিআর বিদ্রোহ। নিষ্ঠুর সে ঘটনায় পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের অনেকের লাশ গর্তে পুঁতে ফেলা হয়। সেনাদের অপারেশনে পাঠানোর পরিবর্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে তিনি আরও ধ্বংস এড়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু সমঝোতার সিদ্ধান্তের বিপরীতে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করার। ঘটনার প্রায় ৫ বছর পর এবং আগামী সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে বাংলাদেশের একটি ফৌজদারি আদালত এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করলো। বাংলাদেশের কোন আদালতই আন্তর্জাতিক মানের নয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিচারকেও দূষিত হিসেবে অভিহিত করেছে। ৮৪৭ অভিযুক্তের মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। শতাধিক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত রাজনীতিবিদও রয়েছেন। এ বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি এবং বিচার চলাকালেই ৭০ জন সন্দেহভাজন মারা যান, যাদের বেশির ভাগকেই হত্যা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.