২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে আঘাত হানবে পাইলিন

ভারতীয় উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় পাইলিন। উড়িষ্যার উপকূলীয় শহর গোপালপুর থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসারের অবস্থান করছে ঝড়টি।
ভারতের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ২৪০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে পাইলিন।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উড়িষ্যার উপকূলীয় শহর গোপালপুর থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। প্রতি ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২১০ কিলোমিটার বেগে এগুচ্ছে পাইলিন।

ভারতের পূর্ব উপকূলীয় উড়িষ্যা ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হানবে ঝড়টি। আঘাত হানলে উড়িষ্যা ১৯৯৯ সালে আঘাত হানা ঝড়ের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে পাইলিন। ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১০ হাজার জন নিহত হয়েছিল।

আইলিনের প্রভাবে অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এ দুই প্রদেশের উপকূলবাসীদের। এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উড়িষ্যার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার জঅনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রদেশটির গানজাম শহর থেকেই ১ লাখ ২০ হাজার জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৮০ হাজার জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে ৫০০ টন ত্রাণ সামগ্রী জড়ো করা হয়েছে।

পাইলিনকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে বিবেচনা রছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারতে আঘাত হানলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যার কমপক্ষে সাতটি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঝড়টি এখন ২১০ থেকে আগাতে থাকলেও ২৪০ কিলোমিটার বেগে এটি উড়িষ্যার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তমের ভূমিতে আঘাত হানবে। আঘাত হানার সময় ঢেউ সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত ভূমি সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

হাওড়া-বিশাখাত্তমের ১১টি রেল চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর উপকূলে মুষলধারে বৃষ্টি হতে পারে। রেলপথের মতো স্থলপথও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কেন্দ্রের সরকার উড়িষ্যার গানজাম, জগতসিংপুর ও খুর্দায় কেন্দ্রীয় পুলিশ উপকূলীয় সাতটি জেলায় ২৩টি ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ও একশ’রও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) ১৬০০ সদস্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছেন।

প্রদীপ ও গোপালপুর বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উড়িষ্যা প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরিয়া নারায়ণ বলেছেন, ‘আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এবার আমরা আগের চেয়ে প্রস্তুত। আমরা ১৯৯৯ সাল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

পাইলিনের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, বিহার ও উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে।

এদিকে পাইলিনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরের পর থেকেই খুলনার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দমকা হওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি।

আবহাওয়া অফিস থেকে খুলনাসহ মংলা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায়ও কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.