মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পর ব্লিডিং একটু চিন্তায় ফেলে দেয় অনেককেই …!

মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পর ব্লিডিং একটু চিন্তায় ফেলে দেয় অনেককেই। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এই উপসর্গের কারণ হতে পারে ইউটেরাইন ক্যানসার। জরায়ুর রকমারি ক্যানসারের মধ্যে এটি এক রকমের ক্যানসার।
বিদেশে মাত্রাতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নেওয়ার ফলে মহিলারা তলপেট বা পেলভিক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভোগেন এ ধরনের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারে।

মেনোপজ হওয়ার দুই-এক দশকের মধ্যেই এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মেনোপজের পর ব্লিডিং যে হেতু এর অন্যতম লক্ষণ, তাই এই ক্যানসার খুব দ্রুত ধরা পড়ে যায়। ফলে রোগও সেরে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। মহিলাদের মোট যত ধরনের ক্যানসার হয় তার ৬% এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার। ব্যাপারটা আসলে কী জরায়ু হল সেই থলি যার মধ্যে গর্ভস্থ ভ্রূণ বেড়ে ওঠে। জরায়ুর ভেতরের আবরণটি হল এন্ডোমেট্রিয়াম। ইউটেরাসের ভেতরের এন্ডোমেট্রিয়ামে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার হয়। এই অংশের কোষগুলির জেনেটিক মিউটেশনের জন্যই মূলত এই ক্যানসার হয়। এতে দিব্যি সুস্থ কোষ বেয়াড়া বাচ্চার মতো আচরণ করতে থাকে। দ্রুত বিভাজিত হতে থাকে। এর ফলে তৈরি হয় টিউমার। ক্রমে এই টিউমার ছড়িয়ে পড়ে দেহের অন্য অংশে। একে বলে মেটাস্টেসিস। ক্যানসারের ধরন দুই রকমের ক্যানসার হয়। টাইপ ওয়ান, টাইপ টু। টাইপ ওয়ান ক্যানসার মেনোপজের আগেও হতে পারে। আবার পরেও হতে পারে। খুব বেশি রকম ইস্ট্রোজেন ব্যবহারই এই ধরনের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। টাইপ ওয়ান ক্যানসার জরায়ুর দেওয়ালে তত ক্ষতি করে না। তাই সময় মতো চিকিৎসা করলে তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়। টাইপ টু ক্যানসার মেনোপজের পর বয়স্ক মহিলাদের হয়। ইস্ট্রোজেনের আধিক্য বা বাইরে থেকে ইস্ট্রোজেন প্রয়োগ করে যে সব থেরাপি করা হয়, তার সঙ্গে এ ধরনের ক্যানসারের কোনও সম্পর্ক নেই। কী করে বুঝবেন ১) প্রথমত মেনোপজের পর ব্লিডিং। সেটি খুব সামান্যও হতে পারে। এমনকি স্পটিংও হতে পারে। ২) ব্লিডিং না হয়ে মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক মহিলার পাতলা, স্বচ্ছ, এক ধরনের ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়। ৩) তলপেটে খিঁচুনির মতো ব্যথাও হয় কারও কারও। ভ্যাজাইনা বা যোনিপথের ক্যানসারেও কিন্তু এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু সঙ্গে যদি মেনোপজের পর ব্লিডিং-এর উপসর্গ থাকে, তবে ইউটেরাসের ক্যানসারের কথাই ভাবা হয়। কারণ ২৫% ক্ষেত্রেই হয় এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের কারণেই মেনোপজের পর ব্লিডিং হয়। ৪) শুধু মেনোপজ নয়, প্রজননক্ষম বয়সেও অস্বাভাবিক মেন্সট্রুয়াল পিরিয়ডও হতে পারে। অনেকের দুটো পিরিয়ডের মাঝে রক্তপাত এবং চল্লিশ পেরনো মহিলাদের অত্যধিক প্রলম্বিত ভারী এবং বার বার ব্লিডিং হতে পারে। কেউ কেউ সহবাসের সময় ব্যথাও অনুভব করতে পারেন। ব্যপারটা উপেক্ষা করা মোটেই উচিত নয়। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন রক্তক্ষয়ের জন্য অ্যানিমিয়াও হতে পারে। কী করা হয় প্রথমে আল্ট্রাসাউন্ড করে বুঝে নেওয়া হয় এন্ডোমেট্রিয়াম কতখানি পুরু হয়েছে। এন্ডোমেট্রিয়াম ৪ মিলিমিটারের কম পুরু হলে ক্যানসারের সম্ভাবনা আদৌ নেই। কিন্তু এর বেশি পুরু হলে হিস্টেরোস্কপি করে এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি করে নেওয়া উচিত। এতে ৯৫% ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা যায়। এর পরেও যদি রক্তক্ষরণের কারণ জানা না যায়, তবে  হরমোন চিকিৎসা করে সমস্যার সমাধান করা হয়। চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসারের অস্ত্রোপচারই একমাত্র সমাধান। ক্যানসার কতটা বিস্তৃত হয়েছে, তা দেখে ঠিক করা হয় রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপির প্রয়োজন কিনা। তলপেটে রোগ সীমিত থাকলে রেডিয়োথেরাপি কাজ দেয়। কিন্তু রোগ আরও ছড়িয়ে গেলে কেমোথেরাপি জরুরি। তবে খুব ভয় পাওয়ার কারণ নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ায় ৯৫% ক্ষেত্রে রোগী ৫ বছর বা তার বেশি সময় বাঁচেন। খুব কম ক্ষেত্রেই প্রজননক্ষম মহিলাদের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার হয়। এ ক্ষেত্রে আগে সন্তান না থাকলে চেষ্টা করা হয় ইউটেরাস ও ওভারিকে বাঁচানোর। মেনোপজ হয়নি এমন মহিলাদের স্টেজ ওয়ান গ্রেড ওয়ান এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারে উচ্চমাত্রায় প্রোজেস্টেরন দিলে ক্যানসারের আগ্রাসী ভাবটা কমে আসে। ফার্টিলিটি পর্বটি মিটলেই হিস্টেরেক্টমির বা জরায়ু বাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.