দুই নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ- সংলাপের তাগিদ জাতিসংঘ মহাসচিবের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন বান কি মুন। সন্ধ্যায় ফোন দেন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। দুই নেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আসন্ন নির্বাচন এবং নির্বাচনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে সংলাপের প্রসঙ্গ আসে। জাতিসংঘ মহাসচিব উভয় নেত্রীকে সংলাপের তাগিদ দেন। আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন, সরকার সংলাপের বিরোধী নয়। বিরোধী দল চাইলে সংসদে তাদের প্রস্তাব দিতে পারে। বিরোধী নেত্রী বান কি মুনকে জানিয়েছেন, সংলাপের জন্য তিনি প্রস্তুত। তবে নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেও জানান তিনি। বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে আলাপকালে বান কি মুন বলেন, জাতিসংঘও নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুনের ফোনালাপের পর প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের প্রতি আগামী সংসদ অধিবেশনে যোগদান এবং আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে তাদের প্রস্তাব উত্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলের যে কোন প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাবো, যদি তা জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, তিনি নিজে এবং তার সরকার সব সময়ই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, টেলিফোনে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বান কি মুনকে আগামী সাধারণ নির্বাচন ও চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন, তিনি ইতিপূর্বে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সমস্যা সমাধানে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ওই প্রস্তাবের কোন জবাব না দিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং পরবর্তীতে বিরোধী দল সরকারের পতনের লক্ষ্যে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শান্তি চায় এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর দেখতে চায়।
আগামী সাধারণ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ কোন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে বলে শেখ হাসিনা আস্থা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সংসদে একটি মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল এবং সরকারি দল এই মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে সম্মতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, কিন্তু বিরোধী দল সমস্যার সমাধান চায় না বলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই তাদের মুলতবি প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি দল আলোচনা, সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যুর সমাধান চায় বলেই জাতীয় সংসদে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় ফোন করেন এবং ফোনে এই আলাপচারিতা প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এমডিজি’র লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রশংসা করেছেন।
বিশ্বে শেখ হাসিনার মতো নেতার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রী এই আমন্ত্রণগ্রহণ করে বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে তার যোগদান নির্ভর করবে জাতীয় সংসদের অধিবেশন পরিস্থিতির ওপর। কেননা এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলবে। প্রধানমন্ত্রী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানান।

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায় জাতিসংঘ: খালেদাকে মুন

জাতিসংঘ সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় বলে খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন মহাসচিব বান কি মুন। সঙ্কট নিরসনে সংলাপে বসার তাগিদ দেন তিনি। খালেদা জিয়াও জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে যাবে না। তবে সংলাপের জন্য তার দল সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াকে ফোন করেন। এসময় প্রায় আধা ঘণ্টা তিনি বিরোধী নেতার সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে উভয়ের ফোনালাপের বিষয়ে বিস্তারিত জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বান কি মুন খালেদা জিয়াকে বলেছেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। একই সঙ্গে তিনি সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিরোধী নেতাকে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার উদ্বেগের কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠভাবে হয়, সেজন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বেশিদূর এগোয়নি বলে তিনি তার উদ্বেগ কথাও বিরোধী দলীয় নেতার কাছে প্রকাশ করেন।
বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, সংলাপের জন্য তার দল সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল বিশ্বাসযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের কোন বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনও জরুরি। তবে কোন দলীয় সরকারের অধীনে ১৮ দল নির্র্বাচনে যাবে না বলে জানান বিরোধী নেতা। সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতার একান্ত সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিরোধী দলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব সুরাতুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.