হি কেম ইন অ্যান্ড ওয়াজ শ্যুটিং এভরিবডিঃ মামনুন by শিহাবউদ্দীন কিসলু ও সাবেদ সাথী

কানেক্টিকাটের নিউ টাউনের মানুষ এখনো স্তব্ধ। এখানে প্রাণ যেনো জাগছেই না। এতগুলো প্রাণ গেলে কী করে জাগে? সবার চোখেই কান্না, মুখে বিষাদের ছাপ। আর ভয়ার্ত শিশুরা খেলা ভুলে গেছে।
মামনুন আহমেদও খেলছে না। স্যান্ডিহুড স্কুল থেকে অক্ষত রেরিয়ে আসা বাংলাদেশি শিশু মামনুনের কথা বাংলানিউজ প্রকাশ করেছে শনিবারই। এবারের উইকএন্ডটি মামনুনের কাটছে ভয়াল এক অভিজ্ঞতা দিয়ে। ভয়, উদ্বেগ ও শোকের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সে। ওর বাবা মা জানালেন মানসিক সুস্থতার জন্য মামনুনকে কাউন্সিলিংয়ে নেওয়া শুরু করেছেন তারা।

কানেক্টিকাটে মামনুন ও তার বাবা মা’র সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

বাবা মাহবুব আহমেদ বললেন, প্রাণে বেঁচে গেলেও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না ছেলেটা। গত রাতে বারবার কেঁদে উঠেছিলো।

মা সৈয়দা সুরাইয়া আহমেদ কান্নায় ভেঙে পড়ের বাংলানিউজের সাথে কথা বলতে গিয়ে। মাহবুব আহমেদ বলছিলেন, “ছেলেটি বুকে পেয়ে আমাদের মনে হয়েছে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি ।”

মামনুনের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো ইংরেজিতে। রাতে কিছু খেয়েছে কী না জানতে চাইলে জানালো জাংক ফুড খেয়েছে। পরিবেশ সহজ করতে  বললাম আমাদের খাওয়াবে?  মামনুন বললো হ্যাঁ খাওয়াবো। জানালো গোটা দিনে একবারও তার খেলার কথা মনেই হয়নি। নিজেই শুরু করলো স্কুলে কি ঘটেছিলো সেই কথা। কষ্টমাখা চেহারা ও কণ্ঠে মামনুন বললো, “দ্য ম্যান হ্যাড গান ইন হিজ হ্যান্ড। হি কেম ইন অ্যান্ড ওয়াজ শ্যুটিং এভরিবডি!  এভরিবডি ওয়াজ রানিং। আই অলসো র‌্যান। উই ওয়্যার সো স্ক্যায়ার্ড।” দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, ইউ আর অ্যা ব্রেভ বয়। সাম ডে ইউ ্উইল বি ভেরি বিগ গাই।

মামনুনের মা সৈয়দা সুরাইয়া আহমেদ কান্নাভাঙ্গা কণ্ঠে বলছিলেন শুক্রবারের সেই ভয়াল সকালটির কথা। স্যান্ডিহুক স্কুলে গুলির ঘটনা শুনেই ছুটে গিয়েছিলেন পাগলের মত । বললেন, “আমি পাগল হয়েগিয়েছিলাম । আমিই সবার শেষে পৌছেছিলাম স্কুলে । এবং মামনুনই একমাত্র শিশু একা শিক্ষকের সাথে অপেক্ষা করছিল।”

মা সুরাইয়া জানালেন, মামনুনের মানসিক অবস্থ্া এখনও ভালো নয় । মাঝরাতে দুবার ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে ছেলেটি ।

ওই সময় মামনুনকে নেওয়া হচ্ছিল কাউন্সিলিংয়ের জন্য । দোয়া চাইলেন ছেলের জন্য । বললেন, স্যান্ডিহুক স্কুলের শিক্ষকরা এত ভালো ভাবাই যায়না। জানালেন একসময় তিনিও ভলান্টারি করেছেন এই স্কুলে ।

নিউটাউনের এই এলাকাটির স্কুল সিটি হিসেবে বরাবরই নিরাপদ ও ভালো বলে পরিচিতি আছে।  এমন শান্ত একটি এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে তা এখানকার বাসিন্দারা এখনো মেনে নিতে বা বিশ্বাস করতে পারছে না, বলেন সুরাইয়া।

মাহবুব আহমেদ বললেন, মামনুন স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় নেবে। নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ে নিতে হবে। স্কুল, পুলিশ এবং সরকারি কর্তৃপক্ষ থেকে কাউন্সিলিংয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে ।

মাহবুব আহমেদ বাংলানিউজকে আরো জানালেন তিনি স্থানীয় সিনেটরকে অভিভাবক হিসেবে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান  আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পরিবর্তনের জন্য।

নিউটাউনের স্যান্ডিহুক স্কুলের আশে পাশে কোন বাঙালির বসবাস নেই তবে কানেক্টিকাটের বাঙালি কমিউনিটিতে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে ।

কানেক্টিকাটের নিউ টাউনে শুক্রবার সকালে এক বন্দুকধারী যুবক মোট ২৮ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ২০টিই শিশু। বাকিদের মধ্যে বন্দুকধারীর মা, স্কুলটির প্রিন্সিপ্যালও রয়েছেন।

স্যান্ডিহুডের ৪র্থ গ্রেডের ছাত্র মামনুন। স্কুলের ভিতরে গুলির সময় তার ক্লাসে ওপর হামলা হয়নি। এতেই প্রাণে বেঁচে যায় মামনুন। নয়তো মানসিক বিকারগ্রস্ত অস্ত্রধারীর হাতে অসহায় অবোধ এই শিশুটিকেও প্রাণ দিতে হতো । মামনুনের বাড়ী বরিশালের আমানতগঞ্জে।

No comments

Powered by Blogger.