অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে টনক নড়ছে মার্কিনিদের

কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের স্কুলের মর্মান্তিক ঘটনা টনক নড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডেমোক্রেটদের অস্ত্র সংরক্ষণ আইন নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ওই ঘটনা।
স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলের বন্দুকধারী গুলিতে ২০ শিশুসহ ২৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কেঁদে ফেলেন ওবামা।

‘হৃদয় ভেঙে গেছে আমাদের। এই শিশুদের বাবা-মা, বোন, স্বজন, সবার জন্য আমাদের হৃদয় ব্যথিত আজ’-এভাবে ওই ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা পরেই জাতীয় টেলিভিশনে ওবামা বলেন, “আরও ট্রাজিডিকে প্রতিরোধ করতে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন দেশের।”

হোয়াইট হাউজের বাইরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের সমর্থনে প্রায় ২০০ মার্কিনি বিক্ষোভ করেছেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউজের বাইরে জমায়েত জনতা মোমবাতি নিয়ে অস্ত্র বিরোধী স্লোগান দেয়। অনেকের হাতে ছিল ‘অনেক অস্ত্র’ এবং ‘নিরস্ত্র’ শীর্ষক প্লেকার্ড।

ম্যারিল্যান্ডের আন্না ওমান তার পাঁচ বছরের শিশু হুগোকে নিয়ে ওই জমায়েতে ছিলেন। তিনি বলেন, “৯/১১’র মতো মনে হচ্ছে আমার। আমাকে কিছু করতে হবে।”

বিক্ষোভকারীদের আশা, গত মাসে পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন। ওবামা নিজেও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে অস্ত্র সংক্রান্ত আইন সংস্কারে এখনও বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন ওবামা।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেছেন, “ওবামার পিছপা হওয়া উচিত নয় এবং কংগ্রেসে আইন করে পাঠানো উচিত।”

এক বিবৃতিতে ব্লুমবার্গ বলেন, “অতীতে কথার ফুলঝুড়ি আমরা অনেক শুনেছি। হোয়াইট হাউজ বা কংগ্রেস কোথা থেকেও আমরা নেতৃত্ব দেখিনি। আজকে এর ইতি টানতে হবে।”

১৯৯৪ সালের পর থেকে অস্ত্র সংক্রান্ত বড় কোন আইন অনুমোদন করেননি যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশন ও অন্যান্য অস্ত্র প্রস্তুতকারী গোষ্ঠীর চাপে এবং অস্ত্রধারী ভোটারদের বিরূপ আচরণের ভয়ে ডেমোক্রেটরাও নতুন আইন পাসের উদ্যোগে এগিয়ে নেননি।

কানেক্টিকাটের ঘটনার আগেও এ ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা  অতীতে ঘটেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে কলোরাডোয় একটি সিনেমা থিয়েটোর এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয় ১২ জন। ২০১১ সালে অ্যারিজোনার টুকসনের একটি সুপারমার্কেটে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয় ছয় জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম এধরণের মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্র।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষের সমর্থকদের ধারণা, বারবার এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং শিশুদের প্রতিরক্ষাহীনতার কারণে ডেমেক্রেটদের দোদুল্যমান অবস্থা থেকে সরে এসে শক্ত হতে সহায়তা করবে।

কলোরাডোর ঘটনার পর অস্ত্র সঙ্গে রাখার পক্ষের সমর্থকরা বলেছিলেন, “যদি সিনেমা দেখতে যাওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদের হাতে অস্ত্র থাকত তাহলে নিহতের সংখ্যা কমানো সম্ভব হত।”
কিন্তু তাদের এ যুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ল স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলের ঘটনায়।

কোয়ালিশন টু স্টপ গান ভায়োলেন্সের নির্বাহী পরিচালক জোস হরউইতচ বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে তার পার্সের মধ্যে অস্ত্র দিতে পারেন না। আপনি এটি করতে পারেন না।”

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও কানেক্টিকাটের ট্রাজেডি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এধরণের ‘গণহত্যা প্রতিরোধ’ করার জন্য ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ’ এ দাবি জোড়ালোভাবে করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।

ব্লগুবার্গ গ্রুপের ‘মেয়রস অ্যাগেনস্ট ইলিগাল গানস’-এর পরিচালক মার্ক গ্লাজ অস্ত্র ইস্যুটি প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “টুকসন, আউরোরা এবং সম্প্রতি নিউটাউনের ঘটনার পর আমাদেরকে ‌এক মুহূর্ত শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এক মুহূর্ত এক মাসে চলে যায়। প্রেসিডেন্ট আসলে আলাদা কিছু ঘটাতে পারেন এবং তার চেষ্টা করার এখনই সময়।”

ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশনের মুখপাত্র এন্ড্র আরুলানানদাম জানান, “ঘটনা পুরোপুরি অবগত না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করবে না এনআরএ।”

২০১২ সালের নির্বাচনে ওবামা বিরোধী ছিল এনআরএ। সিনেটে এনআরএ’র পছন্দের ব্যক্তিদের এবার আসন হয় নি। কিন্তু অস্ত্র নিয়ে যেকোন জাতীয় আইন অনুমোদনে বাধ‍া আসতে পারে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ থেকে। প্রতিনিধি পরিষদের অনেক সঙ্গে গভীর সখ্যতা রয়েছে এনআরএ’র।

No comments

Powered by Blogger.