২০২০’এ বিবাহিত কন্যা শিশুর সংখ্যা হবে ৫ কোটি

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাল্যবিয়ে বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এরমধ্যে বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সর্বাধিক। এখানে তিনটির মধ্যে একটি মেয়ে শিশুরই ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। রোববার জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

তারা সতর্ক করে বলেছে, বর্তমানে বাল্যবিয়ে যে হারে বাড়ছে তাতে ২০২০ সাল নাগাদ ১৫ বছরের কম বয়সী পাঁচ কোটি মেয়ে শিশু স্বামীর ঘরে যাবে। আর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১০ কোটিতে।
আর এ অবস্থাকে মেয়ে শিশুদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মেয়ে শিশু দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘ, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বড় একটি সতর্কবার্তা হিসেবে সামনে চলে এসেছে জাতিসংঘের এ ভবিষ্যদ্বাণী।  

এ ব্যাপারে ইউএনএফপিএ এর নির্বাহী পরিচালক বাবাতুন্দে অসোতিমেহিন বলেন, “এ প্রক্ষেপণ নিঃসন্দেহে এ সমস্যার ব্যাপ্তির ব্যাপারে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করবে।”

রোবাবর তিনি একটি পত্রিকায় বলেন, “এটা এমন এক বয়সে বিয়ে যখন একটা মেয়ে জানেই না বিয়ের অর্থ কি? এভাবে মেয়ে শিশুদের শৈশব ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই মা হচ্ছে। আর আমরা দেখছি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের দারিদ্র্য। এই মুহূর্তে আমাদের এ দুষ্টচক্র প্রতিহত করতে হবে।”

ইউনিসেফের হিসাবে, উন্নয়নশীল দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী তিন জনের মধ্যে একজন মেয়েরই বিয়ে হয়। আর ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশুদের বিয়ের হার সেখানে ১০ শতাংশ।

এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিশু অধিকার সংগঠন প্ল্যান ইউকে এর প্রধান নির্বাহী মারি স্টাউনটোন এই শিশু কনেদের ‘দৃষ্টির অলক্ষে থাকা মেয়ে শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বিস্মৃত’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, “বিবাহিত শিশুরা সাধারণত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এদের নানা ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং অকালে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।”

ইউএনএফপিএ এর মতে, বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সর্বাধিক। এখানে ১৫ বছরের কম বয়সী তিনটি শিশুর মধ্যে একটির বিয়ে হয়ে যায়।

অবশ্য বাল্যবিয়ে সমস্যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেই অত্যন্ত প্রবল। এ অঞ্চলে ১৮ বছরের কম বয়সী ৪৬ শতাংশ শিশুর বিয়ে হয়ে যায়। অপরদিকে সাব-সাহারা অঞ্চলে এ হার ৩৭ শতাংশ, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ২৯ শতাংশ।

ইউরোপের মধ্যে বাল্যবিয়ের সর্বোচ্চ হার জর্জিয়া এবং তুরস্কে। এ দু’দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশুর বিয়ের হার যথাক্রমে ১৭ ও ১৪ শতাংশ।

ইউনিসেফের জ্যেষ্ঠ শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা মোনেতি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিশোরী মেয়েদের মৃত্যুর বড় কারণ গর্ভধারণ। এসব দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে প্রতি বছর ৫০ হাজার জনের মৃত্যু হয়। আর ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী গর্ভবতী মায়েদের তুলনায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর আশঙ্কা পাঁচগুণ বেশি।”

এ সমস্যা থেকে উত্তরণে রাজনীতিক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একশ’র বেশি দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাল্যবিয়ে বন্ধ করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন।

যেখানে বিশ্বের দারিদ্যপীড়িত বেশিরভাগ দেশেই এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মেয়ে শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে।

প্ল্যানের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়ে শিশুর বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার ৭৪ শতাংশ, যেখানে ছেলে শিশুর এ হার ৮৩ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.