সপ্তাহজুড়েই পতনের ধারায় শেয়ারবাজার by নাজমুল আলম শিশির

ত সপ্তাহের চার কর্মদিবসের তিন দিনই দরপতন হয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই)। আর যে একদিন সূচক বেড়েছে, তা ছিল মাত্র ০.৯৭ পয়েন্ট। সূচক কমার সঙ্গে গত সপ্তাহে কমেছে লেনেদেন হওয়া বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দাম। কমেছে লেনদেনের পরিমাণ আর বাজার মূলধনও। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না।

গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার থেকেই মূল্যসূচকের পতন শুরু হয়। টানা তিন কার্যদিবস এই ধারা অব্যাহত ছিল। রবি, সোম ও মঙ্গলবার_এই তিন দিনে ডিএসইতে সূচক কমে ১৮২ পয়েন্ট। আর সপ্তাহের শেষ দিনে গত বুধবার পতনের ধারা থেকে বের হয়ে এসেছিল শেয়ারবাজার। তবে তা অতি সামান্য। সেদিন ডিএসইতে সূচক বেড়েছিল ০.৯৭ শতাংশ। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইতে সূচক ৫৯১০.২০ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু হলেও সপ্তাহের শেষে এসে সূচক দাঁড়িয়েছে ৫৭২৭.৮০ পয়েন্টে। ফলে আগের সপ্তাহ থেকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সূচক কমেছে ১৮২.৪০ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে চরম তারল্য সংকট রয়েছে। তারল্য সংকট না কাটালে বাজার স্বাভাবিক হওয়া অনেক কঠিন হবে। আর তারল্য সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রসহ অনান্য খাতে সুদের হার বেশি হওয়ায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। মানুষ যেখানে লাভ পাবে সেখানেই বিনিয়োগ করবে মন্তব্য করবে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, নিশ্চিত লাভ ছেড়ে কে এই অস্থির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে! এ ছাড়া সরকার শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা খুব বেশি কাজে আসেনি বলে মন্তব্য করেন আবু আহমেদ।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে লেনদেন বন্ধ থাকলেও গড় লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। আর মোট লেনদেনের পরিমাণও আগের সপ্তাহ থেকে গত সপ্তাহে কমেছে। আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৯১ কোটি ৮১ লাখ টাকা, সেখানে গত সপ্তাহে এক হাজার ৩৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাত বদল হয়েছে। আগের সপ্তাহে গড়ে যেখানে প্রতিদিন ৪১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল, সেখানে গত সপ্তাহে তা ২০.৪১ শতাংশ কমে ৩৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ২৬৫টি কম্পানির মধ্যে ২০৪টির শেয়ারের দাম কমেছে। বেড়েছে ৫৮টির আর বাকি তিনটি কম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৬ টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২.৩৬ শতাংশ কম।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার দিক দিয়ে ডিএসইর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। কম্পানিটির শেয়ারের দাম ২১.৫১ শতাংশ বেড়েছে। এর পরে দাম বেড়েছে যথাক্রমে তাল্লু স্পিনিং, চিটাগাং ভেজিটেবল, রহিমা ফুড, এমবি ফার্মা, ইমাম বাটন, ইস্টার্ন হাউজিং, মুন্নু সিরামিক, অরিয়ন ইনফিউশন এবং পঞ্চম আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।
অপরদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং। কম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫১.৫৮ শতাংশ কমেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে। দাম কমার দিক দিয়ে এর পরেই ছিল লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, গ্রামীণ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু, ফার্মা এইডস, প্রিমিয়ার লিজিং, জেমিনি সি ফুড, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।

No comments

Powered by Blogger.