অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল

আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের (এসঅ্যান্ডপি) বিবেচনায়ও বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান (সভরেন ক্রেডিট রেটিং) গতবারের মতো স্থিতিশীল রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের বার্ষিক রেটিং পর্যালোচনায় বাংলাদেশের এই মানকে বিবি(-)/বি নির্ধারণ করেছে।
এর আগে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস তাদের বার্ষিক রেটিং পর্যালোচনায় বাংলাদেশের এই মানকে ‘বিএ৩’ নির্ধারণ করে।
এসঅ্যান্ডপি ২০১০ সালেও বাংলাদেশের ঋণমানকে একই রকম নির্ধারণ করেছিল। দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্ভাবনাময় ধারাবাহিকতা এবং এই প্রবৃদ্ধির জন্য দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে সংস্থাটি তাদের বার্ষিক পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছে।
সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রসারসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলতে থাকলে ও ক্রমশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হলে ঋণমান আরও উন্নততর হবে বলে এসঅ্যান্ডপি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের সার্বভৌম ঋণমান প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তাৎক্ষণিক সংবাদ ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহসান উল্লাহ এ সময় বলেন, ‘বিবি(-) বজায় থাকার অর্থ হলো বাংলাদেশে দৃঢ় ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।’
সংস্থাটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা সক্রিয় অবস্থায় আছে। ফলে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতার চলমান উন্নতি লক্ষণীয়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই উল্লেখযোগ্য মজুদও উন্নয়ন-সহযোগীদের মাঝে আস্থা সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে স্থিতিশীল রাজস্ব ও মুদ্রানীতি প্রণয়নের কারণে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রকৃত মাথাপিছু জিডিপি আয়ের প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ রয়েছে।্রপ্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ, ক্রমবর্ধমান আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ (বিশেষ করে জাহাজনির্মাণ শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে) বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করবে বলে মনে করে এসঅ্যান্ডপি।
সংস্থাটি মনে করে, স্বল্প খরচে ও দীর্ঘ মেয়াদের এককালীন বৈদেশিক ঋণ অর্থনীতির পুনঃঅর্থায়ন ঝুঁকি হ্রাস করেছে। সহনীয় মাত্রা ও সাশ্রয়ী শর্তে বৈদেশিক ঋণ করার সুযোগ, আর বৈদেশিক মুদ্রার সন্তোষজনক মজুদ লেনদেন ভারসাম্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, ঋণমান বলতে মোটা দাগে এটাই বোঝায় যে বিশ্ববাজার থেকে কোনো দেশ বন্ড ছেড়ে ঋণ নিলে সেই ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে দেশটির সক্ষমতা কোন পর্যায়ে রয়েছে।
ঋণমান সাধারণভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একধরনের নির্দেশক। এর ভিত্তিতে তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে তাঁদের ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.