প্রমাণের অপেক্ষায়

পাকিস্তানের ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়টির নির্মাতা তিনি। সেই ইমরান খান যখন দেখেন, কলঙ্কের চুন-সুরকিতে বানানো হচ্ছে নতুন দেয়াল, যে দেয়ালের আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁরই এক সময়ের রেখে আসা কীর্তি; হূদয় তো ক্ষত-বিক্ষত হবেই। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক জানালেন, স্পট-ফিক্সিংয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের জড়িত থাকার খবর শুনে তিনি মর্মাহত। কিন্তু একই সঙ্গে সবার প্রতি তাঁর আহ্বান, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যেন কাউকে দোষী সাব্যস্ত না করা হয়।
পাকিস্তানের ক্রিকেটের অতীতের বিভিন্ন ঘটনা আর ভাবমূর্তির কারণেই কিনা, বাজিকরদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো অভিযোগ উঠলেই বেশির ভাগ মানুষই ধরে নেয়, ঘটনার সঙ্গে নিশ্চয়ই জড়িয়ে আছেন ওই অভিযুক্ত। গত বিশ্বকাপের সময় তো এমনও একটা ধারণা ছড়িয়ে গেল, তখনকার কোচ বব উলমারকে কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটারই খুন করেছেন!
ইমরান তাই আহ্বান জানিয়েছেন, এবার যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই সব ক্রিকেটারকে যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়, ‘ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারির খবরটা শুনে প্রথমে সবাই একটা ধাক্কা খেয়েছে। তবে আমি মনে করি, এখনই এই খেলোয়াড়দের ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত সন্দেহ করাটা অন্যায় হবে। আগে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।’
তার মানে আবার কেউ যেন ভেবে বসবেন না অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের পক্ষে সাফাই গাইছেন ইমরান। বরং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর অনুরোধ একটাই, আগে প্রমাণ হোক। প্রমাণের আগেই কেউ যেন স্রেফ অভিযোগ আর সন্দেহের কারণে সাজা না পায়।
আইসিসিও আপাতত ইমরানের অবস্থানের সঙ্গে একমত। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত বলেছেন, এই ঘটনায় পুরো পাকিস্তান দল আর পাকিস্তানের ক্রিকেটের ওপর থেকে আস্থা হারালে সেটি হবে অন্যায়, ‘আমাকে বলতেই হবে, আমি খুবই হতাশ। অন্তত এ ধরনের খবর পত্রিকায় দেখব, এটি আমি আশাই করিনি। আপাতত আমি মনে করি, সিরিজটা সূচি অনুযায়ীই চলবে। এক-দুজনের অন্যায় কাজের কারণে পুরো দল এবং দেশের ভাবমূর্তি যদি ক্ষুণ্ন হয়, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।’
লরগাত আশ্বস্ত করেছেন, দোষী ক্রিকেটারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে, ‘খেলাটির সততা সমুন্নত রাখাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা এটি ক্ষুণ্ন করবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। তবে আগে সেই অভিযোগ যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আর তদন্তে প্রমাণিত হতে হবে।’
এ ঘটনার পর কেউ কেউ আইসিসির সমালোচনা করছেন। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ও নিরাপত্তা ইউনিটের (এসিএসইউ) কার্যক্রম নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, এখন পর্যন্ত একটি ঘটনাও এসিএসইউ ফাঁস করতে পারেনি। বরং সেটি সবার নজরে এনেছেন কোনো না কোনো সাংবাদিক। ভনের এমন সমালোচনার জবাবে লরগাত বলেছেন, এসিএসইউর লোকবল, ক্ষমতা ও কার্যপরিধি এখনো অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও জানিয়েছে, আপাতত কোনো খেলোয়াড়কে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা তাদের নেই। আগে অভিযোগ প্রমাণিত হোক। তবে ইংল্যান্ডের দুটো সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যে চার ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ইংল্যান্ডের বাকি সফরসূচিতে তাঁদের আর নাও খেলাতে পারে পাকিস্তান। বিবিসি আর ডেইলি মেইল অনলাইন জানিয়েছে, মোহাম্মদ আমির, সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও কামরান আকমলকে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজে নাও খেলানো হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমির, আসিফ আর সালমান বাট আজ পিসিবির প্রধান ইজাজ বাটের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। পিসিবির প্রধান অবশ্য আগেই আশ্বস্ত করেছেন, ‘অকাট্য প্রমাণ’ না পাওয়া পর্যন্ত কাউকেই সাময়িক নিষিদ্ধ করা হবে না।
এই ‘অকাট্য প্রমাণ’ আদৌ পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের দুর্নীতি দমন সংস্থার প্রধান রিক প্যারি। গোপন ভিডিও ক্যামেরায় ধারণকৃত মাজহার মাজিদের টাকা নেওয়ার ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.