এসএ গেমসের হিসাব মেলেনি এখনো

দক্ষিণ এশীয় গেমস শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গেমসের পূর্ণাঙ্গ হিসাব জমা পড়েনি!
এর মধ্যে নিরাপত্তাবিষয়ক উপকমিটির হিসাব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। জটিলতার সৃষ্টি মতবিরোধ থেকে। কমিটির সদস্যসচিব মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ হিসাব জমা দেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছে। কিন্তু ওই হিসাব অনুমোদন করেননি কমিটির সভাপতি ও বিওএর সহসভাপতি মেজর জেনারেল আসহাব উদদীন এনডিসি পিএসসি। তিনি বিওএকে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানান।
বিষয়টা ঝুলে ছিল বেশ কিছুদিন। শেষে সমস্যার সমাধান করতে বিওএর সভাপতি দায়িত্ব দেন বিওএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) ওয়ালিউল্লাহকে। মেজর জেনারেল আসহ্াব উদদীন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন কর্নেল (অব.) ওয়ালিউল্লাহ ও মেজর (অব.) ইমরোজ। এর পরই বিষয়টি সমাধানের দিকে গেছে।
কর্নেল ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তা কমিটির হিসাবের ব্যাপারে ওনার (মেজর জেনারেল আসহ্াব) কিছু অনুসন্ধান ছিল। সেগুলোর ব্যাপারে ইমরোজ কাগজপত্র দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন সফলভাবে। সবকিছু মিলিয়ে দেখেছেন তিনি। বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। উনি সেটা অনুমোদন করে পাঠিয়ে দেবেন বলেছেন।’
মেজর জেনারেল আসহ্াব উদদীন ফোনে এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘এটা এমন কিছু নয়। ছোটখাটো কিছু বিষয় ছিল। আগে কিছু বিল দেওয়া হয়নি। সে জন্য ওনাদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। এখন সব নিজে দেখেছি এবং সবই ঠিক আছে। এই কমিটির বাজেট ছিল দুই কোটি টাকার ওপর। এক কোটি ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’
খরচ যা-ই হোক, গত ২৩ জুন বিওএ ভবনে গিয়ে ওই কমিটির স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দিয়ে কিছু তরুণ ভাঙচুর চালায়। টাকা পায়নি বলে দাবি তাদের। এ ব্যাপারে তদন্তের দাবি তুলেছেন বিওএর একাধিক সদস্য।
ওদিকে বারবার তাগিদ দিলেও অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেয়নি। না দেওয়ার ব্যাখ্যা এভাবে দিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, ‘আমরা সব হিসাব প্রায় দিয়ে দিয়েছি। বাকি আছে শুধু পরিবহন খাতের হিসাব। এই কমিটির আহ্বায়ক তোফাজ্জল সাহেব (ফেডারেশন কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন)। তাঁকে চিঠি দিয়েছি দ্রুত হিসাব দেওয়ার জন্য।’
ছয় মাস পরও চিঠি দেওয়া হচ্ছে হিসাব দেওয়ার জন্য! বিওএ সূত্রের খবর, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে অ্যাথলেটিকসের কিছু চেক আটকে দেওয়া হয়েছিল। তখন অনেক চেষ্টা-তদবির করে আংশিক টাকা ছাড় করিয়েছেন কর্মকর্তারা। এখন নাকি পরিবহন ভাড়ার ভাউচার পাওয়া যাচ্ছে না! তোফাজ্জল হোসেনের মন্তব্য জানা যায়নি অনেক চেষ্টা করেও।
মিডিয়া কমিটির হিসাবও পূর্ণাঙ্গ নয় বলে জানা গেছে, এই কমিটির দেওয়া হিসাবে কমিটির আহ্বায়কের স্বাক্ষর নেই! সদস্যসচিবের স্বাক্ষর আছে কি না, সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির সভা ডেকে হিসাব অনুমোদন করতে হয়। সেটা করা হয়নি—এমন দাবি বিওএর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার। তাঁর দেওয়া তথ্য, কিছু ভাউচার নাকি বাকি আছে।
পুরো ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করলেন মিডিয়া কমিটির সদস্যসচিব মঞ্জুরুল হক, ‘হিসাব দেওয়া হয়েছে। তবে কখনো কমিটির আহ্বায়ককে পাওয়া যায়নি। কখনো আমার ব্যস্ততা ছিল। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ মিটিং করা সম্ভব হয়নি। তবে বিওএ হিসাব গ্রহণ করে বলেছিল, অডিটে আপত্তি উঠলে জবাব দিতে হবে কমিটিকে। শিগগির আমরা আনুষ্ঠানিক মিটিং করে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করব।’
পরিবহন কমিটির পুরো হিসাবও পাওয়া যায়নি। বিওএর এক কর্মকর্তার কথা, ‘ফোন করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সব প্রস্তুত, শুধু সভা করে অনুমোদন নেওয়া বাকি। বিওএ অনুরোধ করতে পারে। তারা হিসাব না দিলে কী করার আছে!’ বিওএকে এই ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছিল হকি-সাইক্লিংও।
হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর বলছেন, ‘এবার অলিম্পিক যেভাবে আর্থিক ব্যাপারটা দেখাশোনা করেছে, তাতে হিসাব না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর হিসাব দিতে বড়জোর মাসখানেক লাগতে পারে। এত দিন লাগার কথা নয়।’
আপ্যায়ন কমিটি তাদের হিসাব দিয়ে দিয়েছে। এই কমিটি অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সহায়তা নিয়েছিল। ভ্যাট, সার্ভিস চার্জসহ নানা রকম খরচ হয়েছে এতে। জানা গেছে, আপ্যায়ন কমিটি গেমসের সময় ৮০ হাজার প্যাকেট সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে। তাদের খরচ দেড় কোটি টাকার মতো।
কমিটির সদস্যসচিব মাহফুজা আক্তারের (কিরণ) কথা, ‘খরচ বেশি হয়নি আমাদের। কত প্যাকেটের হিসাব দিয়েছি মনে নেই। আমাদের খাওয়া ছিল আনলিমিটেড। শুধু আপ্যায়ন নয়, সেনাকুঞ্জে ডিনার, শ্রীলঙ্কা থেকে আনা সাংস্কৃতিক দলের থাকা-খাওয়ার খরচও এর অন্তর্ভুক্ত।’

No comments

Powered by Blogger.