ডার্বির সৌন্দর্যও টানছে না সাকিবদের

সবাই বলছে, এটাই নাকি ইংল্যান্ডের ‘বেস্ট ওয়েদার’। সপ্তাহখানেক আগেও শীতে জমে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। আর এখন গ্রীষ্মের শুরুতে আবহাওয়া এমনই উপভোগ্য যে গরম কাপড় না পরলেই বেশি আরাম লাগছে। মৃদু-মন্দ বাতাস, মিষ্টি রোদ—সব মিলিয়ে ক্রিকেটের জন্য আবেদনময়ী এক পরিবেশ!
কিন্তু শরীর ভালো না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। প্রকৃতির আদর বা ছবির মতো সাজানো ডার্বি শহর—কোনোটাই তাই টানছে না বাংলাদেশ দলকে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হতে এখনো এক সপ্তাহের বেশি বাকি। এর আগে ডার্বিশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে সফরের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা শুরু হলো কাল। যে ম্যাচের প্রথম দিনের বেশির ভাগ সময় জলবসন্তে আক্রান্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে টেলিভিশনে সিনেমা দেখলেন। যাঁরা মাঠে এলেন, অসুস্থতা আর ইনজুরির কারণে এই স্বপ্নের মতো পরিবেশও মন ভালো রাখতে পারছে না তাঁদের অনেকেরই।
ইংল্যান্ডে আসার পর বাংলাদেশ দলের ইনজুরি ও অসুস্থতার তালিকা ক্রমেই লম্বা হয়েছে। তামিম ইকবাল আর জুনায়েদ সিদ্দিকের হাতে ব্যথা এখানে আসার আগে থেকেই। আশার কথা, দুজনই সে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন, তামিম তো ইংল্যান্ডে এসে কাল প্রথমবারের মতো মাঠেও নামলেন। কিন্তু সাকিবের জলবসন্ত আর দলের বেশ কয়েকজন বোলারের টুকটাক ইনজুরিতে গোটা দলের ফিটনেসটাই ভাবিয়ে তোলার মতো। দলের সঙ্গে শামসুর রহমান যোগ দেওয়ার পরও তাই দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না কাউকে।
দল সূত্রের তথ্য, সাকিবের মতো জলবসন্তের আতঙ্ক ছিল নাঈম ইসলামকে নিয়েও। সামান্য জ্বরেও নাকি ভুগেছেন দু-একদিন। নাঈমকে নিয়ে সে শঙ্কা এখন আর না থাকলেও পেসারদের নিয়ে দুশ্চিন্তাটা ঘুরে ফিরেই আসছে। সারে আর এসেক্সের বিপক্ষে প্রথম দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ ও অনুশীলন মিলিয়ে দলের পাঁচ পেস বোলারের তিনজনই কোনো না-কোনোভাবে ইনজুরিগ্রস্ত। শাহাদাতের সমস্যা কুঁচকিতে, শফিউল ইসলামের ব্যথা হাঁটুতে, মাহমুদউল্লাহর পায়ে ব্যথা আর মাহবুবুল আলমের চোট অ্যাঙ্কেলে। পুরোপুরি ঠিকঠাক আছেন কেবল রুবেল হোসেন ও রবিউল ইসলাম। জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া রবিউল শুধু সুস্থই নন, প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে লর্ডসে টেস্ট অভিষেকটাও মোটামুটি নিশ্চিত করে নিয়েছেন এরই মধ্যে।
অভিষেক টেস্টে রবিউল অধিনায়ক হিসেবে কাকে পাচ্ছেন, সেটাই এখন প্রশ্ন। সাকিবের অসুস্থতায় শেষ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহ-অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ২৭ মে শুরু হতে যাওয়া লর্ডস টেস্টেও তাঁকেই টস করতে যেতে হয় কি না, কে জানে। আর কাল লাঞ্চের পর মাঠে আসা সাকিব নিজেও যে খুব আশার কথা শোনাতে পারছেন, তা নয়, ‘পক্স তো নতুন আরও দু-একটা দেখলাম গায়ে...। তবে আগেরগুলো শুকাতে শুরু করেছে। দেখা যাক, কী হয়। আশা তো আছে প্রথম টেস্টেই খেলার।’ জলবসন্তের গুটি শুকিয়ে যাওয়া মানেই পুরোপুরি সুস্থতা নয়। এই রোগ শরীরকে দুর্বল করে দেয় বলে সুস্থ হওয়ার পর ফিটনেস ফিরে পেতেও সময় লাগে। সাকিবের আশা কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
শরীরের অবস্থা গত কয়েক দিন এতই খারাপ ছিল যে দলের খোঁজখবরও ঠিকমতো রাখা হয়নি সাকিবের। জলবসন্ত ছোঁয়াচে রোগ, অন্যদের মধ্যেও সেটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য হোটেল রুমে নিজেকে একরকম ‘একঘরে’ করেই রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বোলারদের ছোটখাটো ইনজুরির খবরও তাই তাঁর অজানা, ‘কার কী অবস্থা আমি আসলে কিছুই বলতে পারব না। কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই...তবে শুনেছি, তামিম শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলবে।’
খেলা-অনুশীলন কোনোটাই করতে পারছেন না, সতীর্থদের সঙ্গে সময় কাটানোরও সুযোগ নেই। রুমে শুয়ে শুয়ে সিনেমা দেখেই পার করতে হচ্ছে সময়। কাল তো দেখলেন এমন একটা সিনেমা যেটার নামটাও বড় অদ্ভুত! ভাগ্য খারাপ হলে নামটা মিলে যেতে পারে ইংল্যান্ড সফরে সাকিবের বর্তমান অবস্থার সঙ্গেও—সিনেমার নাম গেম ওভার!

No comments

Powered by Blogger.