মাঠের মুখ

তিনি যেন একটা চলমান দোকান। দোকানে যেমন নানা রকম পণ্য থরে থরে সাজানো থাকে, তেমনই তাঁর দুই হাত এবং কাঁধের ওপর পণ্য—‘শাবাশ বাংলাদেশ’ লেখা দুই রকমের হেডব্যান্ড, বাংলাদেশ এবং ভারতের পতাকার স্টিকার। ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান যেমন সাজান, তিনিও তেমনই নিজেকে সাজিয়েছেন। দুই গালে দুটি বাংলাদেশের পতাকার স্টিকার, মাথায় ব্যান্ড, কপালে আবার ভারতীয় পতাকার স্টিকার। নাম তাঁর আবদুল আহাদ।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ঘুরে ঘুরে স্টিকার-ব্যান্ড বিক্রি করছেন বলেই শুধু ‘চলমান দোকান’ বলা নয়, দোকান নিয়ে চলে এসেছেন সেই ঢাকা থেকে। আহাদের মূল ব্যবসা অন্য। আরামবাগ ক্লাবের সামনে একটা চায়ের দোকান চালান। তবে বিদেশি দলগুলো ঢাকায় এলেই ওটা ফেলে ‘অন্য দোকান’ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসা ১০ বছর বয়সে। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর চায়ের দোকানের হাল ধরেছেন।
আগে গ্যালারিতে ফ্লাস্কে করে চা-টা বিক্রি করতেন। কিন্তু স্টিকার-ব্যান্ড বিক্রিতে লাভ অনেক বেশি দেখে ঝুঁকেছেন এই ব্যবসায়। চকবাজার থেকে পাইকারি দরে কিনে আনেন। বেচা-বিক্রি জমজমাট, কাল যেমন ১০০টি ব্যান্ড নিয়ে বের হয়েছিলেন, দুপুর ১২টার আগেই ফুরিয়ে গেছে ৫০টি। গত পাঁচ বছরে ঢাকার সবগুলো ম্যাচের সাক্ষী আহাদ। ঢাকার দুই স্টেডিয়ামের তুলনাও করলেন, ‘ঢাকার মাঠে (বঙ্গবন্ধু) অনেক পাবলিক হইত, মাঝে মাঝে মারামারি হইত, ওইটারও একটা আলাদা মজা ছিল। আর মিরপুরে তো মানুষই হয় না।’
হাজার-বারো শ টাকা বিক্রি হলে দিনে প্রায় ছয়-সাত শ টাকা লাভ, জীবন তাই খারাপ চলছে না। লাজুক হেসে জানালেন বছর দুই আগে ‘ফরজ’ কাজটাও (বিয়ে) সেরে ফেলেছেন। এই করেই কি বাকি জীবনটা চলে যাবে? ‘আহাদ এবার অদৃষ্টবাদী, ‘আল্লায় যা রাখছে তাই হইব, এত ভাইবা কী লাভ!’

No comments

Powered by Blogger.