নগরে শব্দ ও বায়ুদূষণ নখদন্তহীন অভিযান কি ফল বয়ে আনবে

নগরবাসী ভালো নেই, এ কথা নতুন কোনো ব্যঞ্জনা তৈরি করে না। বছরের পর বছর ধরে নানা দূষণ, ভেজাল আর বঞ্চনার মাঝে বাস করা এই নগরবাসীর জন্য কোনো সুখবর যেন নেই। কখনো যদি প্রতিকারের আশা জাগে, সে আশা মিইয়ে যেতে সময় লাগে না। কোনো চেষ্টা যদিবা চোখে পড়ে, তাও এমনই অকার্যকর যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো আঁচড়ও কাটতে পারে না। শব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি তা আরও স্পষ্ট করে।
ঢাকা শহরে শব্দদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে বহু আগেই। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল তীব্রতার শব্দে আধাঘণ্টা বা এর বেশি সময় একটানা থাকলে কেউ সাময়িকভাবে বধির হয়ে যেতে পারে। আর ১০০ ডেসিবেল শব্দ দিতে পারে স্থায়ী বধিরতা। খুব কাছ থেকে তিন বছরের কম বয়সী কোনো শিশু যদি ১০০ ডেসিবেল তীব্রতার শব্দ শ্রবণ করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সে বধির হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোতে প্রায় সময়ই শব্দের তীব্রতা থাকে ১০০ ডেসিবেলের ওপরে।
ঢাকা শহরে শব্দ ও বায়ুদূষণের অন্যতম অনুঘটক পাবলিক বাস এবং ট্যাক্সি-সিএনজি অটোরিকশা। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, যানবাহনের দূষণবিরোধী অভিযানে সেই আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। চলতি অভিযানে ১৯৮৩ সালের আইনে দূষণ সৃষ্টিকারী যানবাহনকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে, যা বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রতুল। কোনো আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য যুক্তির অভাব হয় না, এবারও তাই দেখা গেল। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকবল, প্রক্রিয়া, প্রস্তুতি ও সময়ের অভাবকে যুক্তি হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নিয়ে লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে কি ফল পাওয়া যাবে?
কারোর অজানা থাকার কথা নয় যে শব্দদূষণ বধিরতা তৈরি ছাড়াও রক্তচাপ বাড়ায়, হজম করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এবং বয়স্কদের মেজাজ খিটমিটে করে দেয়। কিন্তু এসব ব্যাপার কেউ গুরুত্ব দেয় বলে মনে হয় না। এ অবস্থা সহ্য করে যাওয়াই যেন নগরবাসীর নিয়তি। তাদের দুর্ভোগ আর সমস্যার কোনো শেষ কি আছে?

No comments

Powered by Blogger.