মেক্সিকোয় বিমান ছিনতাই নাটকের অবসান

মেক্সিকোয় গত বুধবার একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিমানটি অবতরণের পর পুলিশ সফলভাবে ছিনতাইকারী দলকে আটক করতে পেরেছে। ছিনতাই করা ওই বিমানের শতাধিক যাত্রী নিরাপদে নেমে এসেছে। বিমানটি মেক্সিকোর পর্যটননগর ক্যানকান থেকে রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে যাচ্ছিল।
কর্মকর্তারা জানান, জোসে ফ্লোরস পেরেইরা নামের একজন বলিভীয় প্রটেস্ট্যান্ট পাদ্রি ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটান। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে ছাড়াও আরও ছয়জনকে আটক করেছে। তবে তাঁদের কাছে কোনো অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।
এয়ারোমেক্সিকো বোয়িং৭৩৭ ফ্লাইটটি বুধবার মেক্সিকোর পর্যটনশহর ক্যানকান থেকে মেক্সিকো সিটি অভিমুখে যাচ্ছিল। এতে ১০৪ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের নাগরিকও। বিমানটি বেলা একটায় আকাশে ওঠার পর জোসে ফ্লোরস পেরেইরা এটি ছিনতাই হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বিমানটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন এবং প্রেসিডেন্ট ফিলিপ ক্যালডেরনের সঙ্গে কথা বলতে চান।
ওই বিমানের ত্রুদ্ধরা বলেছেন, পেরেইরার অভিযোগ, তিনি তিন মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ক্যালডেরনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারেননি। তাই তিনি বিমান ছিনতাই করে হুমকি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন।
পরিবহনমন্ত্রী জুয়ান মোর্লিনার বলেছেন, ‘পেরেইরা বিমান হামলার হুমকি দিলেও ওই বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। যাত্রীরা নিরাপদে বিমান থেকে নেমে এসেছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’
মেক্সিকোর জননিরাপত্তা-বিষয়ক সচিব জেনারো গারসিয়া লুনা বলেন, জোসে পেরেইরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, মেক্সিকো বড় ধরনের বিপজ্জনক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মেক্সিকোয় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি এই বিপদ থেকে লোকজনকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছেন। বিমান ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী তিনিই। এ জন্য তিনি ফলের রসের একটি ক্যানে টেপ পেঁচিয়ে বিমানযাত্রীদের বোমা হামলার ভয় দেখিয়েছেন। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাঁকে আরও তিনজন সাহায্য করেছেন। তাঁরা হলেন (জোসে পেরেইরার ভাষায়) ফাদার, সান ও হলি ঘোস্ট।
পেরেইরা আরও বলেন, ‘তিনি এ ঘটনা ৯ সেপ্টেম্বর ঘটিয়েছেন, কারণ ৯/৯/৯ হলো ৬/৬/৬ তারিখের উল্টো। ৬/৬/৬ তারিখ হলো খ্রিষ্টান ধর্মবিরোধী। বড়দিন কাছাকাছি চলে আসায় তিনি ওই দিন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
জেনারো গারসিয়া লুনা বলেন, জোসে পেরেইরা আগে মাদক গ্রহণ করতেন। তিনি বলিভিয়ায় একটি অস্ত্র ডাকাতির ঘটনায়ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ১৭ বছর আগে তিনি মেক্সিকোয় চলে আসেন।
পেরেইরা বলেছেন, তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বলিভিয়া থেকে ক্যানকানে যান। গানও করেন তিনি। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় জোসে পেরেইরার হাতে বাইবেল ছিল।
ইউটিউবে প্রকাশিত একটি মিউজিক ভিডিওতে পেরেইরা বলেন, ‘আমি মাত্রাধিক মাদক গ্রহণ করতাম। কিন্তু ঈশ্বর বছর কয়েক আগে এর কবল থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন।’
মেক্সিকোর টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। সেখানে দেখা গেছে, বিমানটি নিরাপদে মেক্সিকো সিটির বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রীদের বিমান থেকে নেমে রানওয়ে ধরে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। এর কয়েক মিনিট পর পুলিশ ছয়জনকে হাতকড়া পরিয়ে বের হয়ে আসে।
বোমা বিশেষজ্ঞরা দ্রুত বিমানটির ভেতরে চলে যান এবং তল্লাশি চালান। কিন্তু তাঁরা বিস্ফোরকজাতীয় কিছু পাননি।
রোসিও গারসিয়া নামের এক যাত্রী বলেছেন, ‘বিমানটি যখন অবতরণ করে, তখন ক্রুরা ঘোষণা দেন যে বিমান ছিনতাই হয়েছে। তাঁদের ঘোষণার ওই সময়টা ছিল একটা চরম ভীতিকর মুহূর্ত।

No comments

Powered by Blogger.