বিএসসির অকর্মণ্য জাহাজে কর্মরত ২১ বিদেশি নাবিক

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) প্রায় এক বছর ধরে অলস বসে থাকা ১৩টি জাহাজে মোট ২১ জন বিদেশি নাবিক কাজ করছেন। এঁদের ১৯ জন পাকিস্তানি এবং দুজন মিয়ানমারের নাগরিক। তঁাদের বেতন-ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব জাহাজের মধ্যে ছয়টি বসেই আছে।
তবে বিএসসির কর্মকর্তারা জানান, উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন দেশি নাবিক না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বিদেশি নাবিক নিতে হচ্ছে। তঁাদের মতে, নানা কারণে বিশ্বের অনেক দেশ পাকিস্তানি নাবিকদের নিষদ্ধি করেছে। তাই বাইরে বাংলাদেশি নাবিকদের চাহিদা আছে। তঁারা সেখানে ভালো বেতনও পাচ্ছেন। এ কারণে বিএসসির জাহাজের জন্য পাকিস্তান ও মিয়ানমারের নাবিকদের তুলনামূলক কম বেতনে পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী মোস্তফা চেৌধুরী বলেন, Èনাবিক নিয়োগে আমরা বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশের নাবিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের নাবিক নিয়েছি।'
বিএসসি সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরে নতুন কোনো জাহাজ না কেনায় বিএসসির বহরের ১৩টি জাহাজই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। সাধারণ জাহাজের গড় অর্থনৈতিক আয়ু যেখানে সর্বোচ্চ ২৫ বছর ধরা হয়, সেখানে বিএসসিতে ২৯ বছরের পুরোনো জাহাজও চলছে। ফলে এসব জাহাজ ঘন ঘন মেরামত করতে হচ্ছে এবং তুলনামূলক বেশি জ্বালানি খরচ হচ্ছে।
বর্তমানে বিএসসির ১৩টি জাহাজের মধ্যে দুটি বিদেশ থেকে আমদানি করা অশোধিত তেল বহির্নোঙরের বড় জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসার কাজ করে। বাকি ১১টির মধ্যে ছয়টি চট্টগ্রামে অলস বসে আছে এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত। দুটি জাহাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়ায় এবং আরও দুটি বিএসসির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যটি বড় ধরনের মেরামতের জন্য অপেক্ষা করছে।
অলস বসে থাকা জাহাজগুলোর জন্য কেন বিদেশি নাবিক রাখা হলো জানতে চাইলে বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকেৌশল) মো. সাঈদ উল্লাহ বলেন, Èযেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনার কারণে এসব জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যাতে অন্তত ক্ষতিপূরণটা পেতে পারি, সে জন্য আমরা নূ্যনতম লোকবল নিয়োগ দিয়ে রেখেছি।' তিনি বলেন, Èজাহাজগুলোর জন্য যে পরিমাণ লোকবল দরকার, তার চেয়ে ১৫ জন প্রকেৌশলী ও ১২ জন কর্মকর্তা কম আছে। কম বেতনে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের যেসব নাবিক পাওয়া যাচ্ছে তাদের আমরা ধরে রেখেছি।'
বিএসসির অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, Èযেখানে বাংলাদেশি একজন চিফ অফিসার মাসে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার বেতনে বিদেশি জাহাজে চাকরি করছেন, সেখানে আমরা পাকিস্তানিদের দিচ্ছি সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার ডলার। মিয়ানমারের নাবিকদের বেতন আরও কম।' মাসিক সর্বনম্নি বেতন হিসাব করা হলেও ২২ জন বিদেশি নাবিককে প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এই টাকা নাবিকেরা নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। তঁাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি নাবিক নিয়োগ দেওয়া গেলে পুরো টাকাটাই দেশে থেকে যেত বলে সংশি্লষ্ট একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অধীন চট্টগ্রামের শিপিং মাস্টার শেখ আলী আম্বিয়া বলেন, বাংলাদেশি নাবিকদের মধ্যে ক্রুরা বেকার থাকলেও অফিসারদের কেউ বেকার আছেন বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় পঁাচ হাজার নেৌ কর্মকর্তা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানিতে কাজ করছেন। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি নেৌ কর্মকর্তাদের সুনাম ও ভালো চাহিদা থাকায় তঁারা মোটা বেতনে বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করতে বেশি আগ্রহী।'
সূত্রমতে, বাংলাদেশি অন্তত দুই হাজার ক্রু চাকরির অপেক্ষায় বেকার বসে আছেন বলে জানা যায়।

No comments

Powered by Blogger.