আমরা একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি, এটা খুব স্পষ্ট: রাহুল গান্ধী

রাহুল গান্ধী
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, প্রত্যেকেই জানেন দেশে কী ঘটছে। এটা কারও কাছে গোপন নয়, গোটা দেশ এটা জানে। গোটা বিশ্বও তা জানে। আমরা স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি, এটা খুব স্পষ্ট। শুক্রবার তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।

দেশে গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি লেখায় রামচন্দ্র গুহ, মণিরত্নম, অপর্ণা সেনসহ প্রায় ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের হওয়ায় সেই প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী ওই মন্তব্য করেছেন।

বিশিষ্টজনদের খোলা চিঠিতে বলা হয়, বিরুদ্ধ মতপ্রকাশের অধিকার ছাড়া কোনও গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না। মুসলিম, দলিত ও অন্য সংখ্যালঘুদের গণপিটুনি দিয়ে হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে প্ররোচনামূলক, উগ্রহুঙ্কার দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় চিঠিতে।

এসম্পর্কে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বললে,  সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে, তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে এবং তাকে আক্রমণ করা হয়। গণমাধ্যমকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কী চলছে তা সবাই জানে। এই জিনিস কারও কাছে গোপন নেই।’

রাহুল বলেন, দেশে দুটি মতাদর্শ আছে। একদিকে এমন ধারণা রয়েছে যে এক ব্যক্তি, এক মতাদর্শের ভিত্তিতে দেশের শাসন পরিচালনা করা উচিত এবং অন্য সবাইকে মুখ বন্ধ রাখা  উচিত। অন্যদিকে, কংগ্রেস দল ও বিরোধীরা আছেন যারা এটি মানতে অস্বীকার করছে। তারা বলছে যে এদেশে বিভিন্ন মতাদর্শ, বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন প্রকার ধারণা রয়েছে। তাদের কণ্ঠরোধ করা উচিত নয়। দেশে এটা নিয়েই মূল সংঘর্ষ হচ্ছে।’

অর্থনীতির ইস্যুতেও কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনা করে রাহুল বলেন, ওঁরা কেন অর্থনীতি ধ্বংস করেছেন সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে উত্তর দেয়া উচিত। ভারতের বৃহত্তম শক্তি ছিল এর অর্থনীতি কিন্তু আজ তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশে বেকারত্ব বেড়েছে বলেও রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেন।

এ প্রসঙ্গে শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মন্ত্রী ও কোলকাতার নব বালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার রেডিও তেহরানকে বলেন,  ‘রাহুল গান্ধী যখন পরাজয়ের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন, তাঁর দীর্ঘ চিঠিতে প্রসঙ্গগুলো উত্থাপিত হয়েছে। প্রসঙ্গগুলো ছিল, যে কেন এদেশটা স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে, এর সমস্ত লক্ষণ, সমস্ত বিষয়গুলো ওই চিঠির মধ্যে উল্লেখ করা আছে। কারণ মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে যে একটা দেশ গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত তখনই হয়, যখন তার সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু আজকে আমরা লক্ষ্য করছি, দেখছি যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত হচ্ছে! সকলেই জানেন, নির্বাচন কমিশন, জুডিশিয়ারিতে ভয়ঙ্করভাবে হস্তক্ষেপ হয়েছে যা ভাবাও যায় না। একজন মানুষ মুসলিম হওয়ার অপরাধে তাঁকে ত্রিপুরার হাইকোর্টে তাঁকে চিফ জাস্টিস হতে হবে, বড় হাইকোর্ট তিনি পাবেন না। কেন্দ্রীয় সরকার তার বিরোধিতা করছে।’

No comments

Powered by Blogger.