অমিত শাহর মন্তব্য, উত্তর প্রদেশ ঘটনা হাসিনার ভারত সফরে ছায়া ফেলছে: -দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন

বাংলাদেশী নাগরিকদের টার্গেট করে ভারতীয় রাজনীতিকদের মন্তব্যে ঢাকায় ব্যাপক (ওয়াইডস্প্রিড) উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আসামে এনআরসির বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের মাঝে মাঝেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যায়িত করে যেসব মন্তব্য করা হচ্ছে, তা নিয়ে আভ্যন্তরীণভাবে যে জনউদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে বিষয়ে ভালভাবেই সচেতন বাংলাদেশ। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র মন্তব্য এবং উত্তর প্রদেশের ঘটনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ওপর ছায়া ফেলেছে। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দু’র অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘শাহজ কমেন্টস, উত্তর প্রদেশ ডেভেলপমেন্টস কাস্ট এ শ্যাডো অন হাসিনাজ ভিজিট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক কল্লোল ভট্টাচার্য্য।

তিনি আরো লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক একদিন আগে উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কূটনৈতিক সূত্রগুলো। মঙ্গলবার কলকাতায় বাংলাদেশী নাগরিক ও ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ এক সমান করে দেখাতে চেয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি একটি সেমিনারে বলেছেন, সব অভিবাসীকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘বিদেশী নাগরিকদের’ চিহ্নিত করে দেশ থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উত্তর প্রদেশ পুলিশকে।

একটি সূত্র বলেছেন, আমরা এখনও জানি না যে, এই বিষয়গুলো ঢাকার কাছে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কোনো বার্তা দিচ্ছে কিনা। তবে অবশ্যই এসব মন্তব্য এনআরসির ইস্যুর দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং তা আনা হচ্ছে মুসলিম বাঙালিদের বিরুদ্ধে।

কল্লোল ভট্টাচার্য্য আরো লিখেছেন, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাত হয়েছে। সেই বৈঠকে মোদি এই বার্তা দিয়েছেন যে, আসামে এনআরসি নিয়ে ঢাকাকে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই ভারত থেকে ওইসব মন্তব্য করা হলো। আসামে এনআরসি তালিকা থেকে কমপক্ষে ১৯ লাখ নাগরিককে বাইরে রাখা হয়েছে। ভারতের কূটনৈতিক ধারায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কার কয়েকদিন আগে ঢাকা সফর করেছেন। সে সময়ে তিনি আসামের এনআরসিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। তারই ধারা অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি মন্তব্য করেছেন।

তবে নিউ ইয়র্কে মোদিকে শেখ হাসিনা বলেছেন, এনআরসি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। এই বার্তা বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভারতীয় চ্যাপ্টারে অংশগ্রহণ করবেন। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে তিনি বাংলাদেশের সফলতার কাহিনী তুলে ধরবেন। জানাবেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের বেশ বড় একটি গন্তব্য এখন বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নয়া দিল্লি এবং কলকাতার মধ্যে জটিল রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে অবহিত ঢাকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, ঢাকা দেখতে পাচ্ছে, মুসলিম বাঙালিদেরকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই সূত্রটি আরো বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হলে তাতে মুসলিম বাঙালিদের বাইরে রাখা হবে। ফলে এতে তাদেরকে ভারত থেকে বের করে দেয়ার সম্ভাব্যতা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সূত্রটি প্রশ্ন করেন- তাদেরকে কোথায় ফেরত পাঠানো হবে?

No comments

Powered by Blogger.