আফগানিস্তানে শান্তি, ঐক্য প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের ভূমিকা by সোহাইল খান

আগস্ট মাস পাকিস্তানের জন্য বিশেষ উৎসবমুখর সময়। ৭২ বছর আগে এই মাসেই উপনিবেশ জোয়াল ছিন্ন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল পাকিস্তান।

এই ৭২ বছরের সফরে ছিল নানা চড়াই-উৎড়াই। দেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং সফলভাবে তা সামাল দিয়েছে।

পাকিস্তান দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই অঞ্চল ছিল ভূরাজনৈতিক ফল্ট লাইনে।

আবার পাকিস্তান তার সীমান্তে ভৌগলিক চাপে রয়েছে। শুরু থেকে ভারতের সাথে এবং এখন আফগানিস্তানের সাথেও।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য, জাতিগত সম্পর্ক, ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা, ভাষাগত মিল। দুই দেশের মধ্যকার ভ্রাতৃত্ব বন্ধন কয়েক শ’ বছরের।

দুই দেশের শক্তিশালী অভিন্ন অতীত থাকায় তারা পারস্পরিক সমন্বয় সাধন ও অভিন্ন ধারায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারে। এ কারণেই আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে পাকিস্তান।

আফগানিস্তান ভূবেষ্টিত দেশ। তারা অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপের মুখে আছে গত দুই শ’ বছর ধরে। তবে গত ৫ দশক ধরে তারা আছে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়।

আফগানিস্তানের ঘটনাবলী থেকে প্রতিবেশী পাকিস্তান সুরক্ষিত নয়। এ কারণে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ আফগানিস্তান সবসময়ই পাকিস্তানের অস্তিত্বের স্বার্থের বিষয়।

১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে প্রায় ৩০ লাখ উদ্বাস্তু পাকিস্তানে পালিয়ে এসেছিল।

পাকিস্তান এসব আফগান উদ্বাস্তুকে আগ্রহভরে ও উদারভাবে সহায়তা করেছিল।

তারপর ৯/১১-এর পর আফগানিস্তানে আরেক দফা সহিংসতার মুখে পড়ে। এরপর থেকে শান্তি আর স্থিতিতাবস্থা দেখা যায়নি দেশটিতে।

তবে পাকিস্তান সবসময়ই দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়াস চালিয়ে গেছে।

বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য আঞ্চলিক দেশ শান্তি আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে ব্যবধান দূর করার চেষ্টা করছে।

সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই এই কাজে পাকিস্তানের ভূমিকা স্বীকার করে নিচ্ছে। আফগান পক্ষগুলোর মধ্যে বিভক্তি দূর করতে পাকিস্তান নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

পাকিস্তান অবিচলভাবে বিশ্বাস করে যে আফগান নেতৃত্বে ও আফগান মালিকানাতেই শান্তি ও ঐক্য প্রক্রিয়া সাধিত হতে হবে। পাকিস্তানের ভূমিকা অনেকটাই মধ্যস্ততাকারীর। সব পক্ষের মধ্যে পাকিস্তানের যে প্রভাব আছে, দেশটি তাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তির জন্যও আফগানিস্তানে শান্তি প্রয়োজন। বিশ্বায়ন ও আঞ্চলিকতাবাদের এই সময়ে কোনো দেশের শান্তি ওই দেশের নিজস্ব বিষয় আর নেই। তা পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে আঞ্চলিক শান্তিতে বিশ্বাস করে। কারণ শান্তিই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনতে পারে। আর এ কারণেই দেশটি অর্থপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে কাশ্মির বিরোধের অবসান চাচ্ছে। ভারতের সাথে শান্তি ও স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এটিই সবচেয়ে বড় একক বাধা।

উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের মতো কাশ্মিরও মারাত্মক মানবাধিকার সঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে।

আফগানিস্তানের জনগণ শান্তি কামনা করছে এবং পাকিস্তানের জনগণ তাদের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় একই রকম আগ্রহী।

>>>লেখক: দক্ষিণ আফ্রিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত

No comments

Powered by Blogger.