এনআরসি-বঞ্চিতদের জন্য আরো ১০ আটককেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আসাম সরকারের by রাহুল কর্মকার

চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে যারা বাদ পড়বে তাদের রাখতে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আরো ১০টি আটক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে আসামের রাজ্য সরকার। দ্রুত এসব কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আসামের ১৯৫১ সালের নাগরিক তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন ১০টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে ৩০০০ জনকে রাখা যাবে। এর মানে হলো এনআরসি তালিকা থেকে কয়েক লাখ লোক বাদ পড়লেও সরকার এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০,০০০ জনকে আটক রাখার পরিকল্পনা করেছে।
এনআরসি থেকে বাদ
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই এনআরসি’র যে তালিকা প্রকাশিত হয় তাতে আসামের ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে ৪০ লাখ ৭০ হাজারের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৬ জুন প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকে আরো এক লাখ ২ হাজার জনের নাম বাদ পড়ে। তবে বাদ পড়াদের পুনরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আসামের অতিরিক্ত মূখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক) কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ বুধবার এই পত্রিকাকে বলেন, এনআরসি বহির্ভুত লোকজনকে রাখার জন্য নতুন ১০টি আটক কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি। এগুলো রাজ্যের বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা অনযায়ী বড়পেটা, দিমা হাসাও, গোয়ালপাড়া, কামরুপ, করিমগঞ্জ, লাখিমপুর, নাগাঁও, নালবাড়ি, শিবসাগর ও সনিতপুর জেলায় একটি করে আটককেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
গেয়ালপাড়া জেলায় একটি পুরোদস্তুর আটককেন্দ্র প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানিয়ে কৃষ্ণ বলেন, রাজ্যের ছয়টি কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বিদেশীদের এখানে এনে রাখা হবে। কারাগারে অপরাধীদের সঙ্গে যেন বিদেশীদের রাখা না হয় সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।
গোয়ালপাড়া জেলার ঢাকুরভিটায় এই আটক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তিন বছর আগে রাজ্য সরকার ২০ বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আসাম পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশন লিমিটেড এই কেন্দ্র নির্মাণ করছে। অক্টোবরে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩১ জুলাইয়ের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামের ছয়টি বিভাগে ১২-২৩ পর্যন্ত ধারাবাহিক বৈঠকের আয়োজন করেছে।
প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগগুলোর প্রধানদের বৈঠকে অংশ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এনআরসি তৈরির জন্য ‘ডি’ বা ‘সন্দেহজনক’ ভোটার ইস্যু নিরসনে একটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে ভারতীয় গুর্খা পরিষদ (বিজিপি)।
বিজিপি’র জাতীয় সচিব নন্দ কিরাতি দেওয়ান বলেন, আমরা মঙ্গলবার রাজ্যের এনআরসি সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন যে তারা ডি ভোটার হিসেবে চিহ্নিত কারো মামলা পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন না। এমনকি তার যদিও লিগ্যাসি পারসন বা পরিবারের অন্য কেউ ডি-ভোটার না হন এবং সংযোগ স্থাপনের পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট থাকে তারপরও না।
দেওয়ান পরামর্শ দিয়ে বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে বাদ পড়াদের বেশিরভাগ হয় ‘ডি’ ভোটার অথবা তাদের মামলা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বিচারাধিন অথবা লিগ্যাসি উপাত্ত্বে উল্টাপাল্টা হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক ডি ভোটার আছে যাদের বিরুদ্ধে আসাম পুলিশের বর্ডার উইংয়ের কাছে কোন মামলা নেই বা ট্রাইব্যুনালেও তাদেরকে পাঠানো হয়নি। তাই এদেরকে আলাদা করার জন্য সরকারকে একটি ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.