পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২২ জুলাই বৈঠকে বসছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট by নভেদ সিদ্দিকী

আগামী ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মেহাম্মাদ ফয়সাল সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছে। গতবছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি হবে ইমরান খানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ড. ফয়সাল বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে এ মাসেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এশিয়ায় দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের দিকে ঝুঁকছে। তবে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর চেষ্টা করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দূরত্ব ঘোঁচাতে। সেই লক্ষণও দেখা যাচ্ছে কিছুটা। এ সপ্তাহেই পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন – বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেটি পাকিস্তানের অনেক দিনের প্রত্যাশা ছিল। সংগঠনটির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাশাপাশি একই দিন পকিস্তান নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাতুদ দাওয়া (জেইউডি) প্রধান হাফিস সাইদ ও নাবি আমির আব্দুল রহমান মাক্কিসহ সংগঠনটির শীর্ষ ১৩ জন নেতাকে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ দুই ডজনের মতো মামলা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে।
ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সঙ্কট কাটাতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। চীন, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেকগুলো মিত্র দেশ সফর করেছেন তিনি। আবার সৌদি যুবরাজ, কাতারের আমিরসহ অনেক দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা পাকিস্তান সফর করেছেন এ সময়। এ মাসেই তালেবান নেতাদের সাথেও বৈঠক করার কথা রয়েছে ইমরানের। এরই মধ্যে ইমরানের যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ট্রাম্পের সাথে বৈঠক দেশটির কূটনীতিকে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প-খান বৈঠক
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমরান খানকে জুন মাসেই দাওয়াত করেছিলেন; কিন্তু পাকিস্তান পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশনের কারণে সেই সফর পিছিয়ে দেয়া হয়। দুই নেতার বৈঠকে আঞ্চলিক ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান। কিন্তু তারা শত্রুদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।’
পরে মার্চে ট্রাম্প জানান যে তিনি শিগগিরই পাকিস্তানী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করছেন কারণ দুই দেশের মধ্যে এখন সম্পর্ক বেশ ভালো।
আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় ইসলামাবাদের ভূমিকা
২০১৭ সালে ট্রাম্প তার দক্ষিণ এশিয়া কৌশল ঘোষণার পর থেকেই পাকিস্তানের তীব্র সমালোচক হয়ে উঠেন। পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের কোন উপকার হয়নি বলে ট্রাম্প অভিযোগ করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাল্টা জবাব দেন। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে টুইট-যুদ্ধ হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প তার অবস্থান নমনীয় করে স্বীকার করেন যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান দুই দেশেরই ক্ষতি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন চাচ্ছে পাকিস্তান যেন তার প্রভাব খাটিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তালেবানদের রাজি করায়।
কাবুল সরকারকে পশ্চিমাদের পুতুল বলে মনে করে তালেবান। তাই কাবুলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তারা অস্বীকার করে আসছে।
গত সপ্তাহে আফগান রাজনীতিকদের নিয়ে আন্ত:আফগান সংলাপের আয়োজন করে পাকিস্তান। এতে কাবুল প্রতিনিধি পাঠায়। তবে তালেবানরা যোগ দেয়নি।
২৭ জুন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ইসলামাবাদ সফর করে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা কামনা করেন।
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এসব কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস জন্মেছে যে আলোচনার মাধ্যমে আফগানিস্তানে একটি নিস্পত্তির জন্য পাকিস্তান আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এক পর্যবেক্ষক বলেন, ওয়াশিংটন মনে করে এই পর্যায়ে হোয়াইট হাউজে সফরের আয়োজন করা হলে তা আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখতে পাকিস্তানকে আরো উৎসহ যোগাবে।

No comments

Powered by Blogger.