ভর মৌসুমেও ইলিশের আকাল by মো. আব্দুল লতিফ

ইলিশের নদীখ্যাত রায়পুরের মেঘনায় ভরা মৌসুমেও চলছে ইলিশের আকাল। শ্রাবণের শেষ পর্যায়ে এসেও ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর ভরাট, পানিদূষণ, যত্রতত্র ডুবো চর, কারেন্ট জালের ব্যবহার ও সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে ভরা মৌসুমেও মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ সমৃদ্ধ নদীগুলোতে ইলিশের দেখা মিলবে না। প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও মুক্ত জলাশয় থেকে যেভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে, তাতে এই অঞ্চলে শুধু ইলিশই নয় অন্যান্য জাতের মৎস্য সম্পদের দেখাও মিলবে না। নদীর স্রোত কমে যাওয়ায়, নদীতে বাঁধনির্মাণ ও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রজনন মৌসুমে সাগর থেকে বড় বড় নদীর মোহনায় ইলিশ আসতে পারছে না। এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন রায়পুর কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অহিদুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে তাপমাত্রার আধিক্যের কারণে ইলিশের মৌসুমেরও পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খাবারের অপর্যাপ্ততা, পানিদূষণ, ইলিশ মাছের প্রজননকে ব্যাহত করছে। এই দিকে ভরা মৌসুমে ইলিশ না মেলায় জেলেরা বেকার দিন পার করছেন। নদীপাড়ের জেলে সোহবান আলী বলেন, এই বছর শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও আমরা মাছ ধরতে নদীতে নামতে পারছি না। পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। সামনে ঈদ, জানি না কেমনে পরিবারপরিজন নিয়ে ঈদ করব। জেলে আনোয়ার আলী অভিযোগ করে বলেন, নদীর মোহনায় ভারতীয় জেলেরা বিশেষ কারেন্ট জাল দিয়ে বেড় দেয়ায় ইলিশ মাছ আসতে পারছে না। মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী বলেন, সবার আগে প্রয়োজন ছোট মাছ ধরার উপকরণ নিষিদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র, চাঁদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, নদীর প্রবাহ হ্রাস, দূষণ ও সাগরের মাছের খাদ্য সংকট এবং পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় মাছের আবাসস্থলের পরিবর্তন হচ্ছে। জাটকা নিধন পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলে ইলিশের বংশবিস্তার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তবে শ্রাবণ মাসের শেষেও পরিমান মতো বৃষ্টিপাত এখনও হয়নি। আরো বর্ষণ শুরু হলে মিঠা পানি পান করতে এলে প্রচুর পরিমানে ইলিশ ধরা পড়বে। রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই কিছুদিনের মধ্যে ইলিশের ঝাঁক নদীতে আসতে শুরু করবে। এবার জাটকা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ইলিশের উৎপাদন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: ইলিশের ভর মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলের খ্যাতনামা পাড়েরহাট মৎস্য বন্দর ইলিশশূন্য। শুধু সাগর নয় স্থানীয় নদনদীতেও চলছে ইলিশের বড় আকাল। উপজেলার কচা ও বলেশ্বর নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুমেও ইলিশ ধরা পড়ছে না। কোনো কোনো জেলে দু-একটা ইলিশ পেলেও তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে এ উপজেলার চন্ডিপুর, কলারণ, খোলপটুয়া, টগড়া, বালিপাড়া ও পাড়েরহাট জেলেপল্লীর জেলেরা মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ট্রলার ও জাল নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে গেলেও ইলিশ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। একদিকে মহাজনের দাদন নেয়া অপরদিকে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাই ইলিশ আহরণ মৌসুমে (আষাঢ়-আশ্বিন) সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে পাড়েরহাট মৎস্য বন্দর। স্থানীয় নদনদীতে ধরা পড়া দু-একটি ছোট ইলিশ ছাড়া এ এলাকার হাট-বাজারেও ইলিশ দেখা যায় না। ফলে দারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ইন্দুরকানীর বিভিন্ন এলাকার জেলেপল্লীর বাসিন্দারা। কলারণ গ্রামের জেলে আব্দুর রহমান জানান, ইলিশের ভরা মৌসুমেও সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় আমরা জেলে পরিবারগুলো দেনার দায়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।
পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের আড়ৎদার ইকবাল হোসেন জানান, স্থানীয় নদনদীতে এবং সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরা সমস্যায় আছেন। গত কয়েক দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে পারছেন না। একটা ট্রলার খাবার ও বরফ নিয়ে একটা খ্যাপে একবার সাগরে গেলে লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এবার ইলিশ না পড়ায় ট্রলার মালিকদের অনেক লোকসান হচ্ছে। অপরদিকে জেলে পরিবারগুলো ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.