মালয়েশিয়ার ৭ম প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ

মালয়েশিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডক্টর মাহাথির মোহাম্মদ। রাজকীয় প্রাসাদে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শপথ নেন তিনি। রাজপ্রাসাদের কন্ট্রোলার ওয়ান আহমাদ দাহলান এবি আজিজ জানিয়েছেন, রাজপ্রাসাদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শপথগ্রহণে বিলম্ব সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
এর আগে পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে মাহাথিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৯ মে ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোট পাকাতান হারপান পার্লামেন্টের ২২২ আসনের মধ্যে ১২২টিতে জয় পায়। সে অনুযায়ী, বিকাল ৫টায় বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শপথগ্রহণের কথা ছিল। তবে জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে গেলেও সে সময় শপথ না নিয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে যান মাহাথির মোহাম্মদ। পরে রাত সাড়ে ৯টায় শপথগ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়।
মাহাথিরের জোটের নেতারা সুলতান পঞ্চম মোহাম্মদের সঙ্গে (মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক রাজা) সাক্ষাৎ করেছেন। স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধী জোটের নেতারা সুলতানের সঙ্গের বৈঠকে তাকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথির পার্লামেন্টের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ১০ মে নতুন সরকার গঠনের ইচ্ছার কথা জানান মাহাথির। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় এই মুহূর্তে কোনও সরকার নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা আজই সরকার গঠন করতে চাই। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কোনও সরকার নেই। তাই আজই সরকার গঠন প্রয়োজন। পাকাতান হারপান জোটের ১৩৫টি আসন নিশ্চিত হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে কোনও বাধা নেই।’
১৯৫৭ সাল থেকে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ছিল বারিসান ন্যাসিওনাল (বিএন) জোট। ঐতিহাসিক এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ৬০ বছর ধরে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় থাকা এ জোটের পরাজয় ঘটে। এই জোটের ও সরকারের নেতৃত্বে থাকা নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর আলোচনায় আসেন মাহাথির।
নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে মালয়েশিয়ায়। সেখানে একটি মেয়েকে মাহাথিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওতে কান্নাভেজা চোখে মাহাথির মেয়েটিকে বলছেন, ‘বয়স হয়েছে, আমার আর বেশি সময় নেই। মালয়েশিয়াকে নতুন করে সাজানোর জন্য আমার আরও কিছু কাজ বাকি আছে; সম্ভবত বিগত শাসনামলে আমি কিছু ভুল করেছি, সেগুলো শোধরাতে হবে।’ জনগণ তাকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।
১৯৮০ এবং ৯০ এর দশকে মালয়েশিয়ার যে নাটকীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, তার কৃতিত্ব মাহাথিরের। তার জোটের পক্ষ থেকে সরকার গঠনের ১০০ দিনের মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের এজেন্ডা আলোচনার জন্য সময় নির্দিষ্ট করা, বিরোধী দলের নেতারে সাংবিধানিক মর্যাদা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
১০০ দিনের ঘোষিত কর্মসূচিতে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য বিয়ে ভাতা চালু, ১০ লাখ নতুন হাউজিং, মহাসড়কে টোল ব্যবস্থা বাতিল করা, বিদেশিদের বরাদ্দ দেওয়া বড় বড় প্রকল্পগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান, দুর্নীতির তথ্যদাতাদের আইনি সুরক্ষা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে পার্লামেন্টের অধীনে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাহাথিরের জোট। গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স সংস্কার এবং তথ্য স্বাধীনতা আইন কার্যকর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার এ রূপকার।
আগামী এক দশকের মধ্যে মালয়েশিয়াকে ‘কম দুর্নীতি’র সেরা ১০ দেশে অন্তর্ভুক্ত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাহাথিরের জোট। ঘোষিত হয়েছে আগামী তিন বছর উন্নয়ন বাজেটের অর্ধেক দরিদ্র পাঁচ অঞ্চলে ব্যয়ের পরিকল্পনা। ন্যূনতম মজুরি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি, স্বল্প ব্যবহারকারীদের জন্য পেট্রোলে ভতুর্কি, দরিদ্রদের চিকিৎসায় ভতুর্কির মতো প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.