হুংকার ছেড়ে কেন আলোচনার পথে উত্তর কোরিয়া?

পিয়ংইয়ং-এর পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গত জানুয়ারিতে বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। গত মার্চেও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় পিয়ংইয়ং। এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের হাতে থাকার দবি করে উত্তর কোরিয়া। পাল্টা হুমকি আসে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফেও। তবে এমন হুমকি-পাল্টা হুমকির মধ্যেই চলে আলোচনার প্রস্তুতি। ২৭ এপ্রিল শুক্রবার সীমান্তে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেন দুই কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। দুই নেতার ঐতিহাসিক বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় উঠে আসে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার। তৈরি হয় শান্তি ও ঐক্যের নতুন অধ্যায় রচনার এক দৃঢ় আশাবাদ। আর দুই নেতার এ ঐতিহাসিক বৈঠকের কৃতিত্ব দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু হুংকার ছেড়ে কেন আলোচনার পথে এগুলো পিয়ংইয়ং?
আলোচনার কারণ যাই হোক, শুক্রবার দুই কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক বৈঠকের আগেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন পারমাণবিক পরীক্ষা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
উত্তর কোরিয়া বর্তমানে বাইরের দুনিয়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পিয়ংইয়ং-এর নমনীয় অবস্থানের এটিও একটি কারণ হতে পারে। দেশটি হয়তো এখন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুইটি ঐতিহাসিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশটি সেই বিচ্ছিন্ন অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। চীনা বিজ্ঞানীরা অবশ্য ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তারা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রের অংশবিশেষ ধসে পড়ায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে থাকতে পারে। এই পুঙ্গি রি কেন্দ্র থেকে ২০০৬ সালের পর কমপক্ষে ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ পরীক্ষার পর পুঙ্গি রি কেন্দ্রে পরপর অনেকগুলো ঘাত বা পরাঘাত তৈরি হয়েছিল। ভূতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন যে পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে থাকা পাহাড়ের ভেতরের একাংশ ধসে পড়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার এটিই একমাত্র কারণ, তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ আসেনি। কেননা, এখানে পিয়ংইয়ং-এর অনেক কৌশলগত চিন্তাভাবনা বা সমীকারণ থাকতে পারে।
চীনা গবেষক দলের প্রধান ওয়েন লিয়ানজিং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, তাদের গবেষণার ভিত্তিতে প্রকাশিত নিবন্ধে উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রটির উপযোগিতা বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত তারা দেননি। তারা মনে করছেন, ধসের পর পরীক্ষা কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে কি-না, তা পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন-এর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে কিম বলেন, ‘আমি আশা করছি আমাদের মধ্যে নতুন এক অধ্যায় রচিত হবে। এখানেই এর শুরু। এই মুহূর্তের জন্য আমাদের ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভেবে অবাক হচ্ছি যে কেন এত সময় লাগলো।’
মুন জায়ে ইন বলেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপে যে বসন্ত চলছে আমি আশা করি সেই বাতাস পুরো বিশ্বেই বইছে। আমাদের কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব। বিশ্ববাসী অনেক কিছু আশা করে আছে।’
এদিকে দুই কোরিয়ার আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস বলছে, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে আলোচনায় অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আগামী জুনের গোড়ার দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কিমের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।
দুই কোরিয়ার পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি দৃশ্যমান হয় মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে। ওই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে দেশটির প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ওপর জোর দেন। এখন দুই কোরিয়ার নেতার বৈঠকের যে সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় জুনে ট্রাম্প-কিম বৈঠক থেকেও ইতিবাচক কিছুই বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা সবার। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.