ইয়েমেনে অস্ত্র পাঠানোর অভিযোগ সম্পর্কে ইরানের প্রতিক্রিয়া

সৌদি কর্মকর্তারা ইয়েমেনে অস্ত্র সরবরাহের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। এ অভিযোগকে ইয়েমেনে সৌদি আরবের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা বলে অনেকে মনে করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরব জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে ইয়েমেন থেকে রিয়াদে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের তৈরি বলে দাবি করেছে। এ দাবির প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত গোলাম আলী খোশরু বলেছেন, সৌদি আরব ইয়েমেনে নিজেদের অপরাধযজ্ঞ আড়াল করতেই ইরানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আরোপ করছে যার কোনো ভিত্তি নেই। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র তুর্কি আল মালেকি ইয়েমেন থেকে রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইরান গোপনে ইয়েমেনে ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সৌদি আরবে হামলার পেছনে তেহরানের ভূমিকা রয়েছে।
সৌদি আরব ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। কিন্তু ইয়েমেনের ব্যাপারে হিসেব নিকেশে রিয়াদ দু'টি ভুল করেছে। প্রথমত, তারা ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও জনগণের প্রতিরোধকে আমলে নেয়নি। আমেরিকার সবুজ সংকেত ও কয়েকটি আরব দেশের সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব ইয়েমেনে গত তিন বছর ধরে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। তারা আশা করেছিল, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইয়েমেন দখল করে নিতে পারবে। কিন্তু রিয়াদের সে স্বপ্ন আজো পূরণ হয়নি বরং ইয়েমেন যুদ্ধে তারা চরম ব্যর্থতা পরিচয় দিয়েছে।
সৌদি আরব দ্বিতীয় যে ভুলটি করেছে তা হচ্ছে, ইয়েমেনে বেসামরিক মানুষজন হত্যা ও আগ্রাসন অব্যাহত রাখার পক্ষে যুক্তি তলে ধরার জন্য সেদেশে  ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্র পাঠানোর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ। তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালিম ইয়াশার ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যাপারে বলেছেন, "ইয়েমেনের জনগণের প্রবল প্রতিরোধের কারণে সৌদি আরব কার্যত হতাশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বল হয়ে পড়েছে।" তিনি বলেন, "ইয়েমেনের বর্তমান অবস্থান থেকে বোঝা যায়, ওই অঞ্চলে যুদ্ধের ভারসাম্য আনসারুল্লাহ যোদ্ধাদের পক্ষে অবস্থান করছে এবং পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে জোর করে ক্ষমতায় বসানোর সৌদি চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে ইয়েমেনে তাদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে পারবে না। কারণ সৌদি আরব অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আগ্রাসন চালালেও এবং এ পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয় করলেও ইয়েমেনের জনগণের প্রতিরোধের কাছে তারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। রিয়াদ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যুদ্ধের মাধ্যমে তারা ইয়েমেনের জনগণের ওপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারবে না।
গত তিন বছর ধরে অবরোধ আরোপ  ও আগ্রাসন চালিয়েও ইয়েমেন যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় সৌদি কর্মকর্তারা এখন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি যেমনটি বলেছেন, ইয়েমেনে বিজয়ের অলীক স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে রিয়াদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে অস্ত্র কিনে এবং বিদেশিদের সাহায্য নিয়ে শক্তি অর্জন কিংবা নিজের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
গোলাম আলী খোশরু

No comments

Powered by Blogger.