ট্রাক রূপান্তরিত হল ভয়াবহ মারণাস্ত্রে

ঘাতক এই ট্রাকটিকে ব্যবহার করে অন্তত ৮৪ জনের প্রাণ
কেড়ে নিয়েছেন এক সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গি -এএফপি
অভিনব উপায়ে বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালানো হয়েছে ফ্রান্সের নিস শহরে। আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিবর্তে এবার আক্রমণ চালানো হয়েছে শুধুমাত্র জনস্রোতে ট্রাক চালিয়ে। সাধারণ যানবাহনকে রূপান্তরিত করা হয়েছে মানবঘাতী অস্ত্রে। ইরাকের মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক গবেষণাগার ব্যবহার করে অস্ত্রের প্রয়োগে অভিনবত্ব এনেছিল আইএস। এবার তারা অস্ত্র ছাড়াই বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁটছে। বৃহস্পতিবারের রয়টার্সের প্রতিবেদনে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে যে, আইএস হয়তো এবার এভাবেই নানারকম অজানা উপায়ে ধ্বংসলীলা শুরু করবে। আসলেই আইএস কি হামলার কৌশল পাল্টাচ্ছে? প্যারিস, বেলজিয়াম, ইস্তাম্বুল, বাগদাদ এবং ঢাকার পর নিসের হামলা সন্ত্রাস-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ প্রশ্নকে জোরালো করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের আশংকা, ক্রমেই আল কায়দার পথে হাঁটতে শুরু করেছে আইএস। নিজেদের ভূখণ্ডে অবস্থান হারানো শুরু করেছে তারা, তাই এবার শত্র“র ঘরে গিয়ে আক্রমণ চালানোর পথ বেছে নিচ্ছে।
প্রতিবেদনটি আরও জানাচ্ছে, কঠোর ইসলামিক অনুশাসনের মধ্য দিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করাই আইএসের মূল উদ্দেশ্য ছিল। এ কারণে আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ছিলেন আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। কিন্তু ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস যতই কোণঠাসা হচ্ছে তারা ততই আল কায়দার পথে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু আল কায়দা যেমন সেল বা মডিউল তৈরি করে লক্ষ্যে আঘাত হানত, সে পথে যাচ্ছে না আইএস। বরং প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পশ্চিমা যুবক-যুবতীদের জঙ্গিবাদের দীক্ষা দেয়া হচ্ছে। আর তাদের দ্বারাই হামলা করিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এদের হামলার স্টাইলকে বলা হয় ‘লোন উলফ অ্যাটাক’। কিছুদিন আগেই ভারতে এভাবে আইএএস বা আইপিএস অফিসারদের ওপরে আক্রমণ চালানোর ডাক দিয়েছে আল কায়দা। হাতের কাছে যা মিলবে তা দিয়েই আক্রমণ চালাতে বলা হয়েছিল সেই বার্তায়। যদিও নিসের হামলার দায় এখনও স্বীকার করেনি আইএস। তবে টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিসের হামলার উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সের ‘কৃতকর্ম’ই যে ফ্রান্সকে এ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে, তা জোর দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে ‘নিস অ্যাটাক হ্যাশ ট্যাগ’ তৈরি হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সেই হ্যাশ ট্যাগ বেশি বেশি করে ব্যবহার করতে সমমনাদের উৎসাহ দিচ্ছে আইএসের ডিজিটাল জঙ্গিরা। ইতিমধ্যে এ হামলার প্রশংসায় একাধিক পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে আইএসপন্থীরা। প্রতিবেদনটি আরও জানায়, অস্ত্র ও গোলাবারুদে ভর্তি ট্রাকটি থেকে পাওয়া কাগজপত্র অনুসারে ট্রাকটির চালক নিসের স্থানীয় বাসিন্দা। জন্ম তিউনিশিয়ায় হলেও ফ্রান্সের নাগরিক। বয়স ৩১ বছর। আইএস জঙ্গিদের অনেকেই তিউনিশিয়ার বাসিন্দা। ফলে এ ঘটনার সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইএস অনেক ক্ষেত্রেই কাঠামোবহির্ভূত পথে নাশকতা চালায়। তাদের সংগঠন অনেক ছড়ানো-ছিটানো। তার মধ্যে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জিহাদে দীক্ষিত হয়ে যারা আইএসের হয়ে হামলা চালানোর ছক কষে, তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। ফলে আগাম হামলা ঠেকানো খুব শক্ত। তার ওপরে এভাবে একটি হামলা সফল হলে অন্য জিহাদিদের মধ্যে এ ধরনের হামলা চালানোর উৎসাহ বাড়ে। এই ‘লোন উলফ অ্যাটাকই’ আগামীদিনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.