কেন ছাত্ররাজনীতি?

সম্প্রতি সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন তথা ছাত্ররাজনীতি চালু করার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাঅশনিসংকেত বলেই প্রতীয়মান হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষাবিদেরাও এই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চালু হলে সেখানেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে এবং শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ছাত্রলীগ নেতৃত্ব ছাত্ররাজনীতির অনুপস্থিতির কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে বলে যে ধারণা দিয়েছে, তা-ও পুরো সত্য নয়। সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যেমন জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিচ্ছে না, তেমনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও এই সংক্রমণ হতে মুক্ত বলা যাবে না। দ্বিতীয়ত, অসুস্থ ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাঙ্গনকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। গত এক বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির ৮৭টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া কিংবা নয়জন নিহত হওয়ার ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে। আনুষ্ঠানিক ছাত্ররাজনীতি না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘাতে একজন শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চালু হলে সংঘাত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বর্তমান বাস্তবতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চালু করা হবে আত্মঘাতী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সবাই শিক্ষাঙ্গনে জঙ্গিবাদের অবসান চায়। কিন্তু  অসুস্থ ও সংঘাতময় ছাত্ররাজনীতি দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। এর জন্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের একযোগে কাজ করতে হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটি যদি সত্যিই ছাত্রসমাজের কল্যাণ চায়, তাদের উচিত হবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি সামনে নিয়ে আসা। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সামরিক শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হলেও গণতান্ত্রিক শাসনামলে তা বন্ধ আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির দুষ্টক্ষত না ছড়িয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.