ব্রাভোর ছয়ে উইন্ডিজের জয়

বারবাডোজের আকাশ তখন কাঁদতে শুরু করেছে। টানা দুটি বলে রান নিতে পারলেন না ডোয়াইন ব্রাভো। ড্রেসিংরুমে ড্যারেন স্যামি আর ওটিস গিবসনকে দেখে মনে হলো, পারলে তাঁরাও কেঁদে ফেলেন!
২৯ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪ উইকেটে ১৪৮। ডাকওয়ার্থ-লুইস আইন বলছে, ওই সময় খেলা শেষ হলে ম্যাচ ‘টাই’। ৩০তম ওভার করতে এলেন শহীদ আফ্রিদি। প্রথম দুই বল ডট, পেছনে পড়ে গেল উইন্ডিজ। তৃতীয় বলটি লং হপ, বড় ব্রাভোর পুল আশ্রয় নিল গ্যালারিতে। একসঙ্গে লাফিয়ে উঠলেন স্যামি-গিবসন। সংকেত দিলেন উইকেট ধরে রাখতে। দুই বল পরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। আর তা শুরু হতে পারেনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী ১ রানে!
পুরস্কার বিতরণীতে পরিচিত সেই হাসি দিয়ে স্যামি প্রথমেই বললেন, ‘হ্যাঁ, অনেক দিন পর...!’ অনেক দিন পর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ছাড়া কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নির্দিষ্ট করে বললে ২৫ ম্যাচ পর, সর্বশেষটি ছিল ২০০৯ সালের জুনে ভারতের বিপক্ষে!
বৃষ্টি, ডাকওয়ার্থ-লুইস, পরে ব্যাটিং করার সুবিধা তো ছিলই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল লেন্ডল সিমন্সের ৭০ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটারও। অবশ্য ব্রাভোর ছক্কা না হলে ওই ইনিংসটা বিফলেই যেত। ওই ছয়টাতে যেমন বিফলে গেছে মোহাম্মদ হাফিজের ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস। যদিও পরে একটি উইকেটও নিয়ে ম্যাচ-সেরা হাফিজই।
ডাকওয়ার্থ-লুইসের সঙ্গে উইন্ডিজের টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল ওই হাফিজের কারণেই। ৫০ ওভারে ২৪৯ রানের লক্ষ্যটা বৃষ্টিতে এসে দাঁড়ায় ৩৯ ওভারে ২২৩। মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে আসা কার্ক এডওয়ার্ডস ফিরে যান ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। ব্রায়ান লারার ৪২তম জন্মদিনে বড় কিছু করতে পারেননি ‘নতুন লারা’ ড্যারেন ব্রাভো (২১)। এর পরই তৃতীয় উইকেটে সিমন্স-সারওয়ানের ৭৫ রানের জুটি। সারওয়ানকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন হাফিজ। প্রথম স্পেলে সিমন্সের হাতে ধোলাই হওয়া (১৪ বলে ২৭) তানভির দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই প্রতিশোধ নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দেয় ব্রাভোর ছক্কাটাই।
ওই শর্ট পিচ বলটার জন্য নয়, ম্যাচ শেষে আফ্রিদির কণ্ঠে আফসোস রানটা ২৭০-৭৫ হলো না বলে। দ্বিতীয় উইকেটে হাফিজের সঙ্গে আসাদ শফিকের ১৫৩ রানের জুটিটার পর যেটি খুবই সম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু পাগলাটে সব শট আর রান আউটে নিজেদের সর্বনাশ করেন পাকিস্তানিরা। আড়াই শর কাছাকাছি যেতে পারেন তাঁরা অভিষিক্ত পেসার তানভির আহমেদের ছোট্ট ঝোড়ো ইনিংসে (১২ বলে ১৮)। তিন বছর পর গত সেপ্টেম্বরে দলে ফিরে ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম ঘটানো হাফিজ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, দুটিই এ বছর। আগামী পরশু শেষ ওয়ানডে গায়ানায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৮/৯ (হাফিজ ১২১, শেহজাদ ৬, শফিক ৭১, আফ্রিদি ৮, মিসবাহ ৫, হাম্মাদ ১, সালাউদ্দিন ৫, সালমান ০, তানভির ১৮, আজমল ৫*, জুনাইদ ১*; বিশু ৩/৩৭, ডোয়াইন ২/৬০, রোচ ২/৬৭)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৯.৫ ওভারে ১৫৪/৪ (সিমন্স ৭৪, এডওয়ার্ডস ০, ড্যারেন ব্রাভো ২১, সারওয়ান ২৮, স্যামুয়েলস ৮*, ডোয়াইন ব্রাভো ১১*; জুনাইদ ২/২৬, হাফিজ ১/২৬, তানভির ১/৪৫)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ রানে জয়ী (ডি/এল)। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ হাফিজ।

No comments

Powered by Blogger.