তেহরানে সৌদি দূতাবাসে আগুন, বিক্ষোভ অব্যাহত

সৌদি আরব শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়ার পর শনিবার রাতে তেহরানে
বিক্ষোভকারীরা সৌদি দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এএফপি
সৌদি আরবে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় ফুঁসে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিয়া সম্প্রদায়। শনিবার নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে তীব্র বিক্ষোভ হয়। নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শনিবার দিবাগত রাতেই ইরানে সৌদি আরবের দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইয়েমেন, পাকিস্তান, ভারতের কাশ্মীরসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল রোববার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, শেখ নিমরকে ‘হত্যা করার’ ফল হিসেবে অচিরেই সৌদি রাজনীতিকদের ওপর ‘খোদায়ী গজব’ নেমে আসবে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র সব সহিংস পরিস্থিতি এড়িয়ে ধৈর্য ধারণ করার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খবর এএফপির। গতকাল রাজধানী তেহরানে ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে খামেনি শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে সৌদি কর্তৃপক্ষের ‘রাজনৈতিক ভুল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবে না। এটা তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে।’ এর আগে এক টুইট বার্তায় খামেনি বলেন, ‘এই শহীদের (শেখ নিমর) বেইনসাফি রক্তপাতের ফল শিগগিরই দেখা যাবে। সৌদি রাজনীতিকদের ওপর অচিরেই খোদায়ী গজব নেমে আসবে।’ শনিবার দিবাগত রাতে তেহরানে সৌদি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়।
একপর্যায়ে তারা হামলা চালায়। পেট্রলবোমা ছুড়ে ভবনের ভেতর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর মাশাদে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ইরান বলেছে, সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৪০ জনকে আটক করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মনসুর আল তুর্কি ইরানের প্রতিক্রিয়াকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া রিয়াদে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকেও তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদির ভাষ্য, তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে ইরান বিশ্বজুড়ে সৌদি বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এদিকে, গতকাল ইরাক ও লেবাননে সৌদিবিরোধী প্রচণ্ড বিক্ষোভ হয়েছে। দুই দেশেই সৌদি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। লেবাননের শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ সৌদি শাসকদের ‘বৈশ্বিক অপরাধী’ এবং নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বলেছে, এ ঘটনায় জাতিগত উত্তেজনা ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই উত্তেজনা কমিয়ে আনতে হবে। যে ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন চাদ ও একজন মিসরের; বাকি সবাই সৌদি নাগরিক। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সৌদি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এঁদের বেশির ভাগের মৃত্যুদণ্ড শিরশ্ছেদ করে এবং কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.