আমি আজ কী বিচার পেলাম?

ছেলে হত্যার রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের বাবা বাদী নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেছেন, এ রায় আমি মেনে নিতে পারছি না। এই মামলার পাঁচ আসামি আত্মস্বীকৃত খুনি। তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়নি। আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। আমি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। গতকাল ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতে ব্লগার রাজীব হত্যার রায় শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন ‘রাজীব আপনার সন্তান নয়, বাংলার সম্পদ, আমার সন্তান। তার হত্যার বিচার হবে। কিন্তু আজ আমি কী রায় পেলাম?’ ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দশম দিনে ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। পেশায় স্থপতি রাজীব ‘থাবা বাবা’ নামে ব্লগে লেখালেখি করতেন। হত্যার পর রাজীবের বাবা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশের পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শেষ করে গত বছরের ২৫শে জানুয়ারি ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। চলতি বছরের ২১শে মে আদালতে অভিযোগ গঠনের পর গতকাল এই মামলার রায় হলো। রায়ে ৮ আসামির দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাজীবের বাবা বলেন, ‘হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। দুজনের ফাঁসি দিয়ে অপর আসামিদের ১০ বছর, পাঁচ বছর ও তিন বছরের দণ্ড হত্যার সাজা হতে পারে না। এটা প্রভাবিত রায়। রায়ে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা বেরিয়ে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমি হতাশ।’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এতে মৌলবাদের জয় হলো। আমরা যারা নিরীহ, মুক্তমনা, তাদের পরাজয় হলো।’
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাও এ রায়ে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট’ নন। তিনি বলেন, ‘আমরা সকল আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই এই রায়ের কিছু অংশ আমাদের প্রত্যাশার বাইরে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে।’
রায়ে বলা হয়, দীপের চাপাতির আঘাতে রাজীবের মৃত্যু হয়। এ কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অনিক সেই চাপাতি কিনে এনেছিলেন বলে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সাদমান ইয়াসির মাহমুদ অনেক পরে ধরা পড়ে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, ‘তার ভিত্তিতে’ তাকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার নিজের বা অন্য আসামিদের কারও সম্পৃক্ততার কথা আসেনি। বিচারক রায়ে বলেন, ‘তবে তার খুৎবায় অনুপ্রাণিত হয়েছে এসব আসামি। যে করাণে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ আসে। তার শাস্তি পাঁচ বছরের।’

No comments

Powered by Blogger.