পুতিনের টান টান হাঁটার রহস্য

একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়ে হাঁটার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডান হাত প্রায় নড়েই না। বাম হাতটি অন্য সবার মতো স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে। ডান হাতটি থাকে টান টান। প্রবল পরাক্রমশালী পুতিন বিশ্বের অন্যসব নেতার রক্তচক্ষুকে থোড়াই কেয়ার করেন। ক্ষমতা আর প্রভাবে তিনি একাই এক শ। এ জন্য পুতিনকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। তাঁর দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ই বারবার আলোচনা অসে। এবার এসেছে হাঁটার বিষয়টি। নিন্দুকেরা মুখে খই ফোটাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে পুতিন কী তাহলে জটিল রোগে আক্রান্ত?
নিজের দৃঢ়তা প্রকাশ করতে এভাবে হাঁটেন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন? ছবি: রয়টার্স
নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে পুতিন গাড়ি চালাচ্ছেন, ঘোড়া দাবড়াচ্ছেন, সাঁতারও কাটছেন। শুধু তাই নয়, পুতিন একজন দক্ষ ভার উত্তোলক। একই সঙ্গে জুডোর ব্ল্যাক বেল্টধারী। এখনো অনেকের চেয়ে দ্রুত লিখতে পারেন। সই করতে গেলে হাত একটুও কাঁপে না। তাহলে পুতিনের এমন হাঁটার ভঙ্গির রহস্য কী?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরাও। পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা একমত হয়েছেন, পুতিনের ডান হাত বা কাঁধে কোনো সমস্যা নেই। জন্মগত কোনো ত্রুটিও নেই। তবু রহস্য কাটেনি। শেষ পর্যন্ত খাতা-কলম নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। পর্তুগাল, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের একদল স্নায়ুবিশেষজ্ঞ কোমর বেঁধে নেমেছেন গবেষণায়। তাঁদের নেতৃত্ব দেন নেদারল্যান্ডসের র‍্যাডবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক বাস্তিয়ান ব্লোয়েম। গত সোমবার গবেষণার প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেলে জার্নালে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (ডানে)
সঙ্গে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ (বামে)
ও ক্রেমলিনের চিফ অব স্টাফ সেরগেই ইভানভ
পুতিন যখন হাঁটেন, ডান হাতটি অনেকটা আড়ষ্ট থাকে। মনে হয় যেন ডান হাতে তিনি কিছু ধরে রেখেছেন। এটি একধরনের অভ্যাস হতে পারে। পুতিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত—এটা সবারই জানা। স্নায়ুযুদ্ধের সময় কেজিবির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কেজিবির সদস্যদের ডান হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকত। হাতটি তাঁরা বুকের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে রাখতেন, যাতে শত্রু সামনে এলে সহজেই অস্ত্র হাতে মোকাবিলা করা যায়। গবেষকেরা বলছেন, প্রশিক্ষণের সেই অভ্যাস পুতিন এখনো ধরে রেখেছেন।
গবেষকদের ধারণা, পুতিন এটি সচেতনভাবে করতে পারেন। অথবা অভ্যাস বশেও করতে পারেন। হয়তো পুতিন দেখাতে চান, তিনি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেজিবির সদস্য। এতে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তাও প্রকাশ পায়।
২০১২ সালের ৭ মে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠান ও শপথ নেওয়ার পর হেঁটে যাচ্ছেন পুতিন। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার ভিশন বিষয়ের অধ্যাপক মার্ক নিক্সন বলছেন, মানুষের হাঁটার ভঙ্গিতে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। হাঁটার ধরন দেখে বোঝা যায়, কে আত্মবিশ্বাসী আর কার আত্মবিশ্বাস কম। পুতিনের হাঁটার এই ধরনে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায়।
শুধু পুতিন নন, তাঁর কয়েক জন সহযোগীও একই ভঙ্গিতে হাঁটেন। আরও নিশ্চিত হতে তাঁদের নিয়েও চলেছে পর্যালোচনা। গবেষকেরা অবাক হয়ে দেখেন, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, সাবেক দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনাতোলি সারদিয়োকভ ও সেরগেই ইভানভ একইভাবে হাঁটেন।
হাঁটার সময় পুতিনের ডান হাত খুব কমে নড়ে। ছবি: এএফপি
সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার আনাতোলি সিদোরভের হাঁটার ধরনও একই। দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে দেরি হয়নি। পুতিন ও ইভানভ দুজনেই সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা। সারদিয়োকভ ও সিদোরভও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেই অভ্যাস থেকেই তাঁরা এভাবে হাঁটেন। তবে প্রধানমন্ত্রী দমিত্রি মেদভেদেভের সেনাবাহিনী বা কেজিবির সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসাজশ নেই। তাহলে তিনি কেন এভাবে হাঁটেন?
এ প্রশ্নের উত্তরও আছে। হতে পারে মেদভেদেভ আসলে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অনুসরণ করেন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু হাঁটার ধরন নয় পুতিনের গলার স্বর, তাকানো সবাই অনুসরণ করেন মেদভেদেভ।এমনিতে হালকা মনে হলেও গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ব্লোয়েম মনে করেন, এই গবেষণা স্নায়ুবিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। এএফপি ও বিবিসি অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.