শরণার্থী সংকটের জন্য ইউরোপই দায়ী -সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শরণার্থীদের নিয়ে চলমান সংকটের জন্য ইউরোপকেই দায়ী করেছেন। বাশার রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর দেশে তৎপর ‘সন্ত্রাসীদের’ প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থনের কারণেই দলে দলে মানুষ শরণার্থী হচ্ছে।
সিরীয় একনায়ক বাশারের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাক্ষাৎকারের একটি লিখিত বিবরণ গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়। এতে বাশার বলেন, তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে ক্ষমতা ছাড়বেন না। কেবল দেশের জনগণ চাইলেই তিনি সরে দাঁড়াবেন। কারণ, তিনি ‘জনগণের সম্মতি নিয়ে’ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা জেনেভা সম্মেলনের কথায় তিনি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন।
ইউরোপমুখী সিরিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে চলমান সংকট প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাশার বলেন, সিরিয়ার জনগণ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা চায়। পশ্চিমা দেশগুলো শরণার্থীদের জন্য এক চোখে কাঁদছে, আরেক চোখে তাদের প্রতি অস্ত্রের নিশানা ঠিক করছে। শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলে ইউরোপের উচিত সন্ত্রাসীদের সহায়তা বন্ধ করা। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, সংকটের শুরু থেকেই ইউরোপীয়রা সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। প্রথমে তো ব্যাপারটা শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ ছিল।
বাশার বলেন, যে শরণার্থীরা সিরিয়া ছেড়ে গেছে, তারা মূলত সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে চেয়েছে।
জঙ্গিদের সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে বাশার আল-আসাদ বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট এখন পর্যন্ত ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিস্তার ঠেকাতে পারেনি।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরানের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক প্রযুক্তি তার সেনাবাহিনীর অনেক কাজে লেগেছে। তবে তেহরানের কাছ থেকে কোনো সেনা পায়নি দামেস্ক।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
সিরিয়ার প্রতি ইরানের সমর্থনের বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার বলেন, তেহরানের সঙ্গে দামেস্কের শক্তিশালী বন্ধন দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের পুরোনো। সিরিয়ায় কঠিন ও ভয়াবহ যুদ্ধ চলাকালে ইরানের সমর্থন অপরিহার্য। ইরানের কাছ থেকে সিরিয়া ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক’ সহায়তা পাচ্ছে।
১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় থেকে আরব দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র সিরিয়াই শিয়াপ্রধান ইরানের পাশে রয়েছে। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের পরিবারও আলাবি শিয়া সম্প্রদায়ের।
সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরির সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ক্লান্ত-হতাশ শরণার্থীরা। হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পশ্চিম ইউরোপে যেতে মরিয়া শরণার্থীরা পাশের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় ঢুকতে শুরু করেছেন। গতকাল তোলা l ছবি: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.