রফিকুল হত্যা মামলায়ও আসামি হচ্ছেন সানিয়াত

টাঙ্গাইলে বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ওরফে ফারুক হত্যা মামলায় আটজনকে আসামি করে টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিমের আদালতে আগামী সপ্তাহে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। প্রধান আসামি করা হচ্ছে আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান ওরফে রানার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পাকে। গোয়েন্দা পুলিশ গত শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সানিয়াত খান অভিযুক্ত। এ ছাড়া তাঁর দেহরক্ষী শাহজাহান মিঞাসহ আরও সাতজনকে এই মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত বাকি ছয়জন হলেন সুজন, ছানোয়ার, শফিকুর রহমান, সঞ্জিত ঘোষ, আজাদ ফকির, ইমন ওরফে রুজভেল।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এঁদের সবার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যায় অংশ নেওয়া এবং সহযোগিতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। এর বাইরে সানিয়াত খানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ১২০(খ) ধারায় হত্যার ষড়যন্ত্রের এবং ১০৯ ধারায় দূর থেকে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দাইন্যা ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রাতর্ভ্রমণে বের হন। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের আকুরটাকুর বটতলা বাজার এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ফারুকের ছোট ভাই লাভলু মিয়া বাদী হয়ে পরদিন সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শাহজাহান মিঞা এবং তাঁর অপর দুই সহযোগী সুজন মিয়া ও ছানোয়ার হোসেনকে গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেক আগে তাঁদের নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ অফিসের ছাদে এবং নিজের বাসার ছাদে একাধিক বৈঠক করেন সানিয়াত। সানিয়াত তাঁদের জানান, রফিকুল ইসলামকে হত্যার জন্য ১০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তিনি পাঁচ লাখ টাকা হত্যার মিশনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করেন। হত্যাকাণ্ডের দিন তাঁরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রফিকুল ইসলামকে অনুসরণ করেন। পরে বটতলা বাজার এলাকায় হত্যা করে চলে যান।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শাহজাহান মিঞা, সুজন ও ছানোয়ার এখন কারাগারে। শফিকুর রহমান গ্রেপ্তারের পর জামিনে আছেন। বাকিরা গ্রেপ্তার হননি। এরই মধ্যে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় নাম চলে এলে আত্মগোপন করেন সানিয়াত খান।
পুলিশ সূত্র জানায়, সানিয়াত খান দেশ ত্যাগ করেছেন। ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সানিয়াতের অপর তিন ভাই সাংসদ আমানুর রহমান খান, পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান অভিযুক্ত হচ্ছেন। এঁরা সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই অশোক কুমার সিংহ জানান, চলতি সপ্তাহেই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।
মামলার বাদী রফিকুল ইসলামের ভাই লাভলু মিয়া জানান, এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ায় বিচার পাওয়ার পথ খুলে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.