ছাত্রলীগের নেতা হতে বয়স চুরি!

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বাতিলকৃত
প্রার্থীদের তালিকা। ছবি: প্রথম আলো
মনোনয়নপত্রে বয়স কমিয়ে ‘ধরা খেয়েছেন’ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তিন নেতা। এছাড়া বয়স ও ছাত্রত্ব না থাকায় আরও ৩১ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন, যাদের অনেকেই চলতি সম্মেলনে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী ছিলেন।
আজ শুক্রবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাদ পড়াদের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়। দুই বছর মেয়াদে বর্তমান কমিটি গঠিত হলেও এটি চার বছর পার করায় কমিটির কেন্দ্রীয় বেশির ভাগ নেতাই বয়সের কারণে বাদ পড়েছেন।
আগামীকাল শনিবার ও পরদিন রোববার ছাত্রলীগের ২৮ তম জাতীয় সম্মেলন।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে হলে প্রার্থীদের বয়স ২৭ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। প্রার্থীদের অবিবাহিত ও নিয়মিত ছাত্র হতে হবে। সর্বশেষ দুটি সম্মেলনে এই বয়স মৌখিকভাবে ২৯ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন ফরমে বয়স কমিয়ে প্রার্থিতা চাওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কৃষি সম্পাদক রাইসুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহসভাপতি এনায়েত হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই তিনজনই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদের জন্য আলাদা ফরম কিনেছিলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মনোনয়নপত্রে উল্লিখিত জন্ম তারিখের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক সনদের মিল না থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
প্রার্থিতা বাতিল হওয়াদের তালিকায় দেখা যায়, রাইসুল ইসলামের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এনায়েতের ১৯৮৬ সালের ২৫ নভেম্বর ও সিরাজুল ইসলামের জন্ম তারিখ ১৯৮৬ সালের ১০ জুন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এই তিনজনই কমপক্ষে এক বছর করে কম দেখিয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সনদ জমা দিয়েছেন। তাই তাঁদের তিনজনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বাতিলকৃত
প্রার্থীদের তালিকা। ছবি: প্রথম আলো
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার জন্য ২৪২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৮০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ১৬২ জন ফরম তোলেন। বাতিলকৃতদের তালিকায় দেখা যায়, বয়স, ছাত্রত্ব ও অন্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সভাপতি পদে ১৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
এর মধ্যে বয়স না থাকার কারণে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুজ্জামানের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
এঁদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছরের কমিটি চার বছর পার করায় আমরা বাদ পড়েছি। এখন আমরা নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) দিকে তাকিয়ে। তিনি যা করবেন, সেটাই হবে।’
এ ছাড়া, ইসলামী ছাত্র সেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে হিরণ আহমেদ ও ইসলামী ছাত্রফ্রন্টের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য মাসুদ রানার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ মিয়ার ছাত্রলীগে আগে কোনো পদ না থাকায় তাঁর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়। এ ছাড়া বাকিরা কয়েকজন শিক্ষা সনদ জমা দেননি কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেননি।

No comments

Powered by Blogger.