নেশার টাকার জন্য শ্যালককে অপহরণ

ঢাকার সাভার থেকে অপহৃত দুই কিশোরকে উদ্ধার করেছে র্যা ব ও পুলিশ। এদের একজনকে নেশার টাকার জন্য দুলাভাই অপহরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া দুই কিশোর হলো নয়ন আলী (১৪) ও জুনায়েদ আহাম্মেদ (১২)। নয়ন সাভারের রাজফুলবাড়িয়া খাতরাপাড়া মাদ্রাসার ছাত্র। বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হারাভাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা সৌদিপ্রবাসী। আর জুনায়েদ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নন্দিগ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
র্যা ব-৪ গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, নয়নের মা খাদিজা বেগম সাভারের কলমা এলাকায় থেকে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। থাকেন সেখানেই। ১৪ জুলাই সকালে কলমার ওই বাসা থেকেই নয়নকে অপহরণ করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের ছেলে নোমান হোসেন (১৯)। নোমান তাঁর তিন বন্ধু সেলিম (১৮), লম্বা সেলিম (২০) ও সাকিব হোসেনের (১৮) সহায়তায় কৌশলে নয়নকে একটি অটোরিকশায় তোলেন। নয়নকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জামসা বাজারে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখেন তাঁরা। এরপর মুঠোফোনে তার মা খাদিজা বেগমের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। খাদিজা বিষয়টি র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব)-৪-এর সাভার ক্যাম্পে জানান। সাধারণ ডায়েরি করেন সাভার মডেল থানায়। র্যা ব নয়নকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করলে তা টের পেয়ে অপহরণকারীরা তিনবার নয়নকে নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেন।
র্যা ব জানায়, প্রযুক্তির সাহায্যে বুধবার বেলা তিনটার দিকে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ভরালী বটতলা এলাকায় মানছুরের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে নয়নকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় নোমান, সেলিম ও মানছুরের ছেলে রাজিবকে (২৪)। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তেঁতুলঝোড়া এলাকা থেকে আটক করা হয় লম্বা সেলিম ও সাকিবকে।
এ ঘটনায় খাদিজা বেগম গতকাল সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। এতে আটক সবাইকে আসামি করা হয়েছে।
শ্যালককে অপহরণ: জুনায়েদের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, বছর তিনেক আগে সাভারের আশুলিয়ার কুমকুমারী গ্রামের দুলাল ফকিরের ছেলে মনির হোসেনের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নানা অজুহাতে মনির তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নেন। ঈদের পর মঙ্গলবার মনির তাঁর মেয়েকে নিয়ে ময়মনসিংহে তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি আবারও টাকা চান। টাকা দিতে অপারগতা জানালে মনির বুধবার সকালে কৌশলে তাঁর ছেলে জুনায়েদকে কুমকুমারীতে নিয়ে আসেন। এরপর তাঁর ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
হাবিবুর রহমান জানান, অপহৃত ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গতকাল সকালে তিনি মেয়েকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে সাভারে আসেন। তিনি সাভার মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মালেকা বানুকে জানান। ওই কর্মকর্তা তাঁকে আশুলিয়া থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
সাভার মডেল থানায় হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে এ প্রতিবেদক ঘটনার বর্ণনা শুনে তাঁদের সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুল হাসানের কাছে নিয়ে যান। এরপর নাজমুল হাসান কুমকুমারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুনায়েদকে উদ্ধার করেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মনির পালিয়ে যান।
হাবিবুর রহমানের মেয়ের ভাষ্য, তাঁর স্বামী ও শ্বশুর এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁরা মাদক সেবনও করেন। বিষয়টি বিয়ের আগে তাঁর পরিবারের জানা ছিল না। নেশার টাকার জন্যই তাঁর স্বামী জুনায়েদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চান।
এএসপি নাজমুল হাসান বলেন, জুনায়েদকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা শেষ করার পর তাকে স্বজনদের কাছে দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.