জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র

অতীতে বহুবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে ভেস্তে গেলেও, এবার দেশটি নিজেই চিন্তা করছে এতে স্বাক্ষরের বিষয়টি। মূলত, ইসরাইলের সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের সময় এক প্রচারাভিযানে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর একটি মন্তব্যই এর অন্যতম কারণ। নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে ডানপন্থী ভোট লাভের সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে নিজের প্রধানমন্ত্রীত্বে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে না বলে অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন নেতানিয়াহু! এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। নির্বাচনে জয়লাভের পর আগের অবস্থান থেকে সরে এসে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কমপক্ষে তিনবার নিজের অবস্থান পুনর্ব্যাক্ত করেন তিনি। তবে এবার তার মন্তব্যে কিছুতেই গলতে রাজী নয় যুক্তরাষ্ট্র। আগের মন্তব্যটিকেই তার চ’ড়ান্ত মনোভাব হিসেবে ধরে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। শনিবার হাফিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, আমরা তার কথাটি ধরে নিয়েছি, যখন তিনি (নেতানিয়াহু) বলেছিলেন যে তার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অন্তত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। ওই অঞ্চলে আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখতে চাই না। এটি নিশ্চিত করতে আর বাকী যেসব বিকল্প উপায় রয়েছে, সেসব ভেবে দেখছি আমরা। নেতানিয়াহু সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করার পর এটিই এ নিয়ে প্রেসিডেন্টের প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্য। নিজের প্রচারাভিযানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে দেবেন না বলে ইসরাইলি ভোটারদের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন নেতানিয়াহু। তবে নির্বাচনে জয়ের পরপরই সুর পাল্টে দুই রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। সাধারণত, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর বিজয়ীকে সঙ্গেসঙ্গেই ফোন করে অভিনন্দন জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানাতে দুই দিন সময় নিয়েছেন ওবামা। তাদের কথোপকথনে দুই রাষ্ট্র সমাধান স¤পর্কে নিজের সত্যিকার অবস্থান নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন কিনা, তা সাংবাদিকদের জানাতে অস্বীকার করেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জোশ আর্নেস্ট। কিন্তু ওবামা নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স¤পর্কের ভবিষ্যৎ ‘পুনর্বিবেচনা’ করা হবে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সৃষ্টি স¤পর্কে নেতানিয়াহুর উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরই ওবামা তাকে এমন কথা জানান। ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি এখন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতিদান স¤পর্কিত জাতিসংঘের প্রস্তাবটিতে স্বাক্ষরের কথা চিন্তাভাবনা করছে। অথচ, অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বিরোধীতার কারণে ওই প্রস্তাব পাশ হয়নি। হাফিংটন পোস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভোটের দিন আরব-ইসরাইলি ভোটারদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর বিরূপ মন্তব্য নিয়েও কথা বলেছেন ওবামা। নেতানিয়াহুর ওই মন্তব্যকে অনেকে বর্ণবাদি বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। ওবামা জানান, আরব ভোটারদের নিয়ে নেতানিয়াহুর বাগাড়ম্বরপূর্ন মন্তব্য ইসরাইলের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক। যদিও ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইহুদীদের ঐতিহাসিক মাতৃভ’মি ও ইহুদিদের জন্য একটি দেশের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে, তবুও গণতান্ত্রিক ইসরাইলে সকলের সঠিক ও নায্য আচরণ লাভের অধিকার রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.